এ বছর রেমিটেন্স বাড়বে ৭%, ২০২৪ সালে ২৩ বিলিয়ন ডলার: বিশ্বব্যাংক
‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ ৩৯’ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স নিয়ে আশার কথা জানিয়েছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
ওয়াশিংটনভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি বলেছে, বিদায়ী ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশি প্রবাসীরা মোট ২৩ বিলিয়ন (২ হাজার ৩০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন। যা হবে ২০২২ সালের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।
তবে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সূচকে প্রবৃদ্ধি হবে না; চলতি বছরের সমান ২৩ বিলিয়ন ডলারই আসবে।
‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ ৩৯’ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট-িবিওপি) সংকটের কারণে বাংলাদেশ বৈধ পথে (ব্যাংকিং চ্যানেল) রেমিটেন্স আনতে প্রণোদনা বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তার ইতিবাচক ফল হিসেবে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে।
মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নীতির কারণে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করতে উৎসাহিত করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ ৪৬ হাজার কর্মী কাজের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। গত বছরের পুরো সময়ে (২০২২ সাল) এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৫০ হাজার।
জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও গত দুই বছরে (২০২১ ও ২০২২) বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ ২২ বিলিয়ন ডলারের আশপাশেই আটকে ছিল।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছর উপসাগরীয় দেশগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। এই দেশগুলো বাংলাদেশের রেমিটেন্সর প্রধান উৎস। গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকতে পারে। পাশাপাশি তেলের দাম কম হওয়ায় ২০২৪ সালে ওই দেশগুলোতে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে।
প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১৮৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এই প্রবৃদ্ধির পুরোটাই আসবে ভারতের রেমিটেন্স প্রবাহের হাত ধতে। ২০২৩ সালে ভারত ১২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরো এরিয়া ও জিসিসি দেশগুলোতে দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ২০২৪ সালের রেমিটেন্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ কমতে পারে।
রেমিটেন্স বাড়াতে প্রণোদনা
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।
২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছেন। এই আড়াই টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিটেন্স বাড়ছে না
বিএমইটি’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেড় কোটির বেশি প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। গত কয়েক বছর ধরে জনশক্তি রপ্তানিও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু সে অনুপাতে দেশে রেমিটেন্স আসছে না।
এ কথা স্বীকার করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন প্রবাসীদের সংখ্যার তুলনায় রেমিটেন্স কম আসার কারণ খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন।
সোমবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা যে পরিমাণ লোক বিদেশ পাঠাচ্ছি, তার তুলনায় রেমিটেন্সের পরিমাণ কম। অনেক দেশ এর চেয়ে কম লোক পাঠিয়ে বেশি রেমিটেন্স আয় করছে। এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে।
“সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তাদের বিষয়টি খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “প্রবাসীরা যেন বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠায়, সেটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠালে সরকার কী কী সুবিধা দিচ্ছে, হয়তো অনেকে জানেন না। এ ব্যাপারে প্রচার আরও বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলোরও সমাধান করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, “আমাদের দক্ষ কর্মী দরকার। দক্ষ কর্মী না হলে উপযুক্ত বেতন পাচ্ছে না। আমরা যেনতেনভাবে বিদেশে কর্মী পাঠাব না। বেতন, নিরাপত্তাসহ সবকিছু নিশ্চিত করে তবেই বিদেশে পাঠাব।”
অর্থবছরের হিসাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে (২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন) ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৮ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার পাটিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।
বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেও রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই মাসের প্রথম ১৫ দিনে (১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর) ১০৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
মাসের বাকি ১৬ দিনে (১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) এই হারে রেমিটেন্স আসলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২ দশমিক ২১ বিলিয়ন (২২১ কোটি ১৩ লাখ) ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।
কমেন্ট