যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্সে ধস, দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ স্থানে নেমেছে
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১৭৬ কোটি (১.৭৬ বিলিয়ন) ডলার।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। গেলো বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।
সব মিলিয়ে ছয় মাসের হিসাবে অর্থাৎ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা এক হাজার ৮০ কোটি (১০.৮০ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে ধস নেমেছে; দ্বিতীয় থেকে এক ধাক্কায় চতুর্থ স্থানে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার দেশভিত্তিক রেমিটেন্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১২ কোটি ৫৬ লাখ (১.১২ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১৭৬ কোটি (১.৭৬ বিলিয়ন) ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। আর এতে রেমিটেন্স আহরণে দ্বিতীয় স্থান থেকে চতুর্থ স্থানে নেমে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাজ্যের ফেডারেশন-সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে—প্রায় ২ বিলিয়ন (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। বরাবর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসত সৌদি আরব থেকে।
জুলাই-ডিসেম্বরের হিসাবে সেই সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে শীর্ষ উঠে এসেছে আমিরাত; এসেছে প্রায় ২ বিলিয়ন (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। এই ছয় মাসের মোট রেমিটেন্সের ১৮ দমিক ৩২ শতাংশই এসেছে আরব আমিরাত থেকে।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সৌদি আরব থেকে এসেছে ১৪২ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আর যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ১৩৭ কোটি ডলার।
আরব আমিরাত থেকে রেমিটেন্সের উল্লম্ফনের আভাস গত অর্থবছরেই পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটি থেকে ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার (৩.০৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
প্রথমবারের মতো আমিরাত থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে আসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। গত অর্থবছরে তিনটি দেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছিল। বাকি দুটি দেশ ছিল—সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র।
গত অর্থবছরের কয়েক মাসে সৌদি আরবের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাত থেকে বেশি রেমিটেন্স আসলেও বরাবরের মতই ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সৌদি আরব থেকে।
তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ কম ছিল; ৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ (৪.৫৪ বিলিয়ন) ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে; ৩৫২ কোটি ২০ লাখ (৩.৫২ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৪১ শতাংশ।
যক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২০৮ কোটি (২.০৮ বিলিয়ন) ডলার।
সবশেষ ডিসেম্বর মাসে আরব আমিরাত থেকে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এর আগে এক মাসে এই দেশ থেকে এতো বেশি রেমিটেন্স কখনই আসেনি।
ডিসেম্বরে সৌদি আরব থেকে রেমিটেন্স এসেছে ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২৮ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ২১ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আগের মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ হিসাবে নভেম্বরের চেয়ে ডিসেম্বরে রেমিটেন্স কমেছে ৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স কমার কারণ জানতে চাইলে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকার অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সেখানে আমাদের যারা প্রবাসী আছেন, তাদের খরচ বেড়ে গেছে। সে কারণে দেশটি থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে।”
একই কথা বলেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের প্রবাসীরা তুলনামূলকভাবে ভালো চাকরি করেন। বেশি বেতন-ভাতা পান। তাই তারা গত কয়েক বছর ভালো রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা এখন কম পাঠাচ্ছেন।”
কমেন্ট