২৬ দিনে ১৭৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স, মাস শেষে ২ বিলিয়ন ছাড়ানোর আশা
ডিসেম্বরে প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। ওই অঙ্ক ছিল ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অক্টোবরে এসেছিল ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার; নভেম্বরে ১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।
দেশের অর্থনীতির আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।
২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারির প্রথম ২৬ দিনে ১৭৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
মাসের বাকি পাঁচ দিনে (২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ২১১ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। ওই অঙ্ক ছিল ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি জানুয়ারির মাসের ২৬ দিনে প্রবাসীরা ১৭৬ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৩ সালে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৯০ কোটি (২১.৯০ বিলিয়ন) ডলার। ২০২২ সালে এসেছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। এর মানে ২০২৩ সালে দেশে প্রবাসী আয় প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার, ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৩ কোটি ডলার ও ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে।
ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা কাঙ্ক্ষিত নয়। কারণ, প্রতিবছর যে পরিমাণ জনশক্তি রপ্তানি হয়ে থাকে, সে অনুযায়ী প্রবাসী আয়ে তেমন প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না।
জানুয়ারি মাসের প্রথম ২৬দিনে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৩ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫৭ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫২ লাখ ৬০ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।
দুই বছর ধরে চলা সংকটের কারণে দেশে মার্কিন ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় উঠেছে। তবে ব্যাংকগুলো আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম ১২০ টাকার বেশি নিচ্ছে। কারণ, ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স কিনছে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে। এরপরও বিদায়ী বছরে প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হয়নি। যদিও গত বছর রেকর্ড পরিমাণ—১৩ লাখ ৭ হাজার ৮০৫ জন জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
গত সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়।
কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।
এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।
দুই বছর পর গত বছরের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিটেন্স—সব পর্যায়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা করে কমানোর ঘোষণা দেয় বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। ২৩ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
২৯ নভেম্বর আরও ২৫ পয়সা কমানো হয়। দুই সপ্তাহ পর ১৩ ডিসেম্বর আরও ২৫ পয়সা কমানোর ঘোষণা দেয় বাফেদা ও এবিবি।
তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর ১ টাকা কমানো হয়।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনছে ব্যাংকগুলো। আর আমদানি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ১১০ টাকা দরে বিক্রি করছে।
তবে বাফেদা ও এবিবির বেঁধে দেওয়া দামে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর ঘোষণা করে আসছে বাফেদা ও এবিবি।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।
২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছেন। এই আড়াই টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
কমেন্ট