প্রতিদিন রেমিটেন্স ৭৭১ কোটি টাকা

প্রতিদিন রেমিটেন্স ৭৭১ কোটি টাকা

মাসের বাকি ২০ দিনে (১০ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি) এই হারে এলে মাস শেষে জানুয়ারির মতো এই মাসেও রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ২০৩ কোটি ৫৪ লাখ (২.০৩ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে হিসাব বলছে।

দেশের অর্থনীতির আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে।

২০২৪ সালের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম নয় দিনে ৬৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭ কোটি ১ লাখ ডলার।

বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা, প্রতিদিন এসেছে ৭৭১ কোটি টাকা।

মাসের বাকি ২০ দিনে (১০ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি) এই হারে এলে মাস শেষে জানুয়ারির মতো এই মাসেও রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ২০৩ কোটি ৫৪ লাখ (২.০৩ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে হিসাব বলছে।

ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে। এই মাসেও যদি ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে আসে তাহলে রিজার্ভের উপর চাপ কমবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১০ কোটি (২.১০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। যা ছিল সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

আগের গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল প্রায় ২ বিলিয়ন (১৯৯ কোটি ১২ লাখ) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

তার আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের নয় দিনে ৬৩ কোটি ১৮ লঅখ ডলার রেমিটেন্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬ কোটি ৯১ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫৩ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর নয়টি বিদেশি ব্যাংক এনেছে ১৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২৩ সালে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৯০ কোটি (২১.৯০ বিলিয়ন) ডলার। ২০২২ সালে এসেছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। এর মানে ২০২৩ সালে দেশে প্রবাসী আয় প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে।

এর আগে ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার, ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৩ কোটি ডলার ও ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে।

ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে।

তবে এতে খুশি নন অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “প্রবাসী আয় যেটা বাড়ছে, সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়। কারণ, প্রতিবছর যে পরিমাণ জনশক্তি রপ্তানি হয়ে থাকে, সে অনুযায়ী প্রবাসী আয়ে তেমন প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না। গত বছর রেকর্ড পরিমাণ—১৩ লাখ ৭ হাজার ৮০৫ জন জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে রেমিটেন্স বাড়ছে না।”

“তবে জানুয়ারিতে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেও যদি ২ বিলিয়ন ডলার আসে, তাহলে রিজার্ভের উপর চাপ খানিকটা কমবে।”

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়।

কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।

এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।

২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছেন। এই আড়াই টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

৭ মাস পর ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিটেন্স পরবর্তী

৭ মাস পর ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিটেন্স

কমেন্ট