২৩ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা

২৩ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা

মাসের বাকি ৬ দিনে (২৪ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি) এই হারে এলে মাস শেষে জানুয়ারির মতো এই মাসেও রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ২১০ কোটি (২.১০ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে হিসাব বলছে।

দেশের অর্থনীতির আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে।

২০২৪ সালের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম ২৩ দিনে ১৬৪ কোটি ৬১ (১.৬৫ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭ কোটি ১৬ লাখ ডলার।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৩ দিনে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭৮৫ কোটি টাকা।

মাসের বাকি ৬ দিনে (২৪ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি) এই হারে এলে মাস শেষে জানুয়ারির মতো এই মাসেও রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ২১০ কোটি (২.১০ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে হিসাব বলছে।

ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে। এই মাসেও যদি ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে আসে তাহলে রিজার্ভের উপর চাপ কমবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১০ কোটি (২.১০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। যা ছিল সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

আগের মাস গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল প্রায় ২ বিলিয়ন (১৯৯ কোটি ১২ লাখ) ডলার।

তার আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ দিনে ১৬৫ কোটি ডলার রেমিটেন্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬ কোটি ৩০ লাখ ১০ হাজার ডলার।

বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৪০ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার ডলার। আর নয়টি বিদেশি ব্যাংক এনেছে ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ১২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।

এর সঙ্গে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ দিনের ১৬৫ কোটি ডলার যোগ করলে চলতি অর্থবছরের সাত মাস ২৩ দিনে (২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি মাসের ২৩ ফেব্রুয়ারি) মোট ১৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

টানা কয়েক মাস রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “প্রবাসী আয় বাড়ায় রিজার্ভের উপর চাপ কমবে। অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে। তবে যে হারে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ছে, আরও বেশি রেমিটেন্স আসার কথা ছিল। গত বছর রেকর্ড পরিমাণ—১৩ লাখ ৭ হাজার ৮০৫ জন জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে রেমিটেন্স বাড়ছে না।”

‘এখন অনেক রেমিটেন্স অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে আসছে’ উল্লেখ করে আহসান মনসুর বলেন, “হুন্ডি বন্ধ হলে প্রতি মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে আসবে “

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়।

কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।

এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।

২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছেন। এই আড়াই টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

রিজার্ভ বাড়ছে

রেমিটেন্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। তার এতে রিজার্ভ খানিকটা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সবশেষ রিজার্ভের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

তার আগের সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তবে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আবার কমে আসবে বলে জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রিজার্ভসহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।

তাতে দেখা যায়, এক মাস আগে ২৪ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।

চলতি মাসের প্রথম দিন ১ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে নামে ২৫ দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলার।

৭ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার।

এদিকে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এই মাসে পণ্য রপ্তানি করে ৫৭২ কোটি ৪৩ লাখ (৫.৭২ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।

একক মাসের হিসাবে এই আয় অতীতের যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ (৬.৩৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।

রেমিটেন্সে ঢল, ১৬ দিনেই এলো ১১৫ কোটি ডলার পরবর্তী

রেমিটেন্সে ঢল, ১৬ দিনেই এলো ১১৫ কোটি ডলার

কমেন্ট