রেমিটেন্সে হোঁচট, ৩ মাসে সবচেয়ে কম মার্চে

রেমিটেন্সে হোঁচট, ৩ মাসে সবচেয়ে কম মার্চে

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ অথবা ১১ এপ্রিল দেশে ঈদ উদযাপিত হবে। তার আগে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা।

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত বছরের মার্চের চেয়ে কম ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে কম এসেছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে মার্চে ২১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭০৫ কোটি টাকা।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ অথবা ১১ এপ্রিল দেশে ঈদ উদযাপিত হবে। তার আগে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা।

২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ (২.১১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ফেব্রুয়ারি মাসে তার চেয়েও বেশি ২১৬ কোটি ৬০ লাখ (২.১৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন। যা ছিল আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স এসেছিল । ২০২৩ সালের মার্চে ২০২ কোটি ২৫লাখ (২.০২ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল।

আর এর উপর ভর করে দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা ডলারের ‘অস্থির’ বাজার ‘সুস্থির’ হতে শুরু করেছে।

কমতে শুরু করেছে ডলারের তেজ। মান বাড়ছে টাকার। কয়েক দিন আগে যেখানে ১২৪ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিটেন্সের ডলার কিনছিল ব্যাংকগুলো; এখন তা ১১৩/১১৪ টাকায় কিনছে। সোমবার আমদানি বিল নিষ্পত্তিতে ডলারের দাম নেওয়া হয়েছে ১১৬ থেকে ১১৭ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ১২২ থেকে ১২৪ টাকা।

খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটেও ডলারের দরে বড় পতন হয়েছে। সোমবার প্রতি ডলার ১১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাস দেড়েক আগেও তা ১২৬/১২৭ টাকায় বিক্রি হতো।

তবে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর এখনও অনেক কম; ১১০ টাকা। অর্থাৎ এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক ১১০ টাকায় ডলার কিনছে। বাংলাদেশ ব্যাংকগুলোর কাছে যে ডলার বিক্রি করছে, সোয়াপ কারেন্সির আওতায় টাকা-ডলার অদলবদল করছে সেটাও ১১০ টাকা নিচ্ছে।

মাস দু’য়েক আগে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর ১১০ টাকায় উঠেছিল।

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ১৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের এই সাত মাসে ১৬ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছিল বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছিল বলে জানিয়েছেন তারা।

তবে মার্চ মাসে কিছুটা হোঁচট খেয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কমতে শুরু করে রেমিটেন্স।

সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।

এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।

গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছেন। এই আড়াই টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিটেন্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬৭ কোটি ১৭ লাখ ডলার। আর নয়টি বিদেশি ব্যাংক এনেছে ৮১ লাখ ১০ হাজার ডলার।

রেমিটেন্স বাড়ছে, স্বস্তি ফিরছে অর্থনীতিতে পরবর্তী

রেমিটেন্স বাড়ছে, স্বস্তি ফিরছে অর্থনীতিতে

কমেন্ট