এবার ঈদের আগে বাড়েনি রেমিটেন্স

এবার ঈদের আগে বাড়েনি রেমিটেন্স

প্রতিবারই দুই ঈদের পর দেশে প্রবাসী আয় কমে যায়। এবারও যদি তেমনটি হয়, তাহলে মার্চের পর এপ্রিলেও ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের কম রেমিটেন্স দেশে আসবে বলে হিসাব বলছে।

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন, ঈদের আগে রেমিটেন্স বাড়বে; কিন্তু তেমনটি হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার প্রবাসী আয়ের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি মাসের পাঁচ দিনে (১ থেকে ৫ এপ্রিল) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। পরের সাত দিনে (৬ থেকে ১২ এপ্রিল) পাঠিয়েছেন ৪২ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

সব মিলিয়ে ১২ দিনে দেশে এসেছে (১ থেকে ১২ এপ্রিল) ৮৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১১০ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১২ দিনে ৯ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮০৪ কোটি টাকা।

প্রতিবারই দুই ঈদের পর দেশে প্রবাসী আয় কমে যায়। এবারও যদি তেমনটি হয়, তাহলে মার্চের পর এপ্রিলেও ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের কম রেমিটেন্স দেশে আসবে বলে হিসাব বলছে।

গত মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

গত বছরের মার্চের চেয়ে কম ছিল ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে কম এসেছিল ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

১১ এপ্রিল দেশে ঈদ উদযাপিত হয়।

২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ (২.১১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ফেব্রুয়ারি মাসে তার চেয়েও বেশি ২১৬ কোটি ৬০ লাখ (২.১৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন। যা ছিল আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স এসেছিল । ২০২৩ সালের মার্চে ২০২ কোটি ২৫লাখ (২.০২ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল।

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ১৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের এই নয় মাসে ১৬ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছিল বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছিল বলে জানিয়েছেন তারা।

তবে মার্চ মাসে কিছুটা হোঁচট খায়; এপ্রিলেও সেই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কমতে শুরু করে রেমিটেন্স।

সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।

এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।

রিজার্ভের পতন ঠেকাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।

গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছেন। এই আড়াই টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

রেমিটেন্সে হোঁচট, ৩ মাসে সবচেয়ে কম মার্চে পরবর্তী

রেমিটেন্সে হোঁচট, ৩ মাসে সবচেয়ে কম মার্চে

কমেন্ট