রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বগতি, ১০ দিনে এল ৮১ কোটি ডলার
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৯ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ১৪ লাখ ডলার বা ৯৫২ কোটি টাকা।
দেশের অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। রোজার ঈদের পরও রেমিটেন্স বাড়ছে; যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
চলতি মে মাসের ১০ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৮১ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৯ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ১৪ লাখ ডলার বা ৯৫২ কোটি টাকা।
মাসের বাকি ২১ দিনে (১১ থেকে ৩১ মে) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৫০ কোটি (আড়াই বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা হবে একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
এর আগে ২০২১ সালের জুলাইয়ে এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।
ঈদের মাস এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। আর এই সূচকের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। গত কয়েক মাস ধরে রেমিটেন্স প্রবাহে বেশ ভালো গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অনেকের ধারণা ছিল, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের পর রেমিটেন্স কম আসবে। কিন্তু তেমনটি না হয়ে উল্টো আরও বেশি আসছে।
গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা-ডলারের বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করেছে। এই পদ্ধতিতে এখন থেকে দেশের মধ্যে ডলারের দর লাফ দিতে পারবে না, কেবল হামাগুড়ি দিতে পারবে। আর সেই হামাগুড়ি দিতে হবে নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে। সীমার বাইরে যাওয়া যাবে না। আপাতত সেই সীমা হচ্ছে ১১৭ টাকা। এতে এক লাফে ডলারের দর বেড়েছে ৭ টাকা।
অর্থাৎ ব্যাংকগুলো এখন ১১৭ টাকা দরে রেমিটেন্স সংগ্রহ করতে পারবে। এরসঙ্গে যোগ হবে সরকারের দেওয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনা।
‘ক্রলিং পেগ’ চালুর ফলে ডলারের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া কোরবানির ঈদ সামনে রেখে রেমিটেন্স বাড়ার আশাও রয়েছে।
গত ১১ এপ্রিল দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে।
গত মার্চে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
আগের দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছিল। জানুয়ারিতে এসেছিল ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল আরও বেশি, ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠান।
আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। নভেম্বরে আসে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল ) ১৯ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের এই দশ মাসে ১৭ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা ছিল তার আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
প্রতিবারই দুই ঈদের আগে রেমিটেন্সপ্রবাহ বাড়ে; ঈদের পর কম আসে। কিন্তু এবার রোজার ঈদের আগে প্রবাসী আয় বাড়েনি। ঈদের পর অবশ্য বেশি আসছে।
কমেন্ট