১২ দিনেই দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স
বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৭ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১২ কোটি ১৭ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা।
১৭ জুন সোমবার দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। তার আগে ১২ দিনেই (১ থেকে ১২ জুন) ১৪৬ কোটি (১.৪৬ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এর আগে কখনই এক দিনে এত বেশি রেমিটেন্স দেশে আসেনি। আর এই রেমিটেন্সের উপর ভর করে রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৫৪ কোটি ডলার।
এমনিতেই গত কয়েক মাস ধরে অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিটেন্সের গতি ভালো ছিল; ঈদের আগে তা আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের প্রথম ১২ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৭ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১২ কোটি ১৭ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা।
মাসের বাকি ২৩ দিনে (১৩ থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ৩৬৫ কোটি (৩.৬৫ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। যা হবে একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
তবে বরাবরই দুই ঈদের পর রেমিটেন্সের গতি কমে যায়। সে হিসাবে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা জানতে আরও কিছুদির অপেক্ষা করতে হবে।
১৬, ১৭ ও ১৮ জুন ঈদের ছুটি। ব্যাংকগুলোও এই তিন দিন বন্ধ থাকবে। তার আগে শুক্র ও শনিবার (১৪ ও ১৫ জুন) সাপ্তাহিক ছুটি। ১৩ জুন বৃহস্পতিবার অফিস-আদালত ও ব্যাংক খোলা ছিল। রেমিটেন্সের অর্থ এখন ব্যাংকের পাশাপাশি বিকাশ-নগদসহ অন্য মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) মাধ্যমেও দেশে আসে।
সে বিবেচনায় রেমিটেন্সের বর্তমান ঊর্ধ্বগতি ঈদের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।
২০২০ সালের জুলাই মাসে এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।
গত মে মাসে ২২৫ কোটি (২.২৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত বছরের মে মাসের চেয়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি। আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে বেশি ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। প্রতিদিনের গড় হিসাবে মে মাসের রেমিটেন্স ছিল ৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার।
একক মাসের হিসাবে মে মাসের রেমিটেন্স ছিল দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
তার আগের মাস এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
আগের দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছিল। জানুয়ারিতে এসেছিল ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল আরও বেশি, ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার পাঠিয়েছিলেন।
আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। নভেম্বরে আসে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৩-২৪ প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের এই ১১ মাসে ১৯ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা ছিল তার আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। টাকা-ডলারের বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর ফলে ডলারের দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। তার প্রভাব মে মাসের রেমিটেন্সে পেড়িছিল।
“এখন রেমিটেন্স যেটা বাড়ছে—সেটা মূলত কোরবানির ঈদের কারণে। ঈদকে সামনে রেখে পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।”
গত ৯ মে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা-ডলারের বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করেছে। সেই পদ্ধতিতে টাকা-ডলারের বিমিয় হার হবে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা।
অর্থাৎ ব্যাংকগুলো ১১৭ থেকে ১১৮ টাকার মধ্যে রেমিটেন্স সংগ্রহ করতে পারবে। এরসঙ্গে যোগ হবে সরকারের দেওয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনা।
বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১৮ টাকা।
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বেড়েছে ৫৪ কোটি ডলার
এদিকে রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
গত ৬ জুন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৫৪ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ২৯ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।
সবশেষ গত মার্চ মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।
সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ বর্তমানের ১৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে পৌনে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। সেই ক্ষেত্রে রিজার্ভ এখনও টানটান অবস্থায় আছে।
চলতি জুন মাসের মধ্যে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাজেট সহায়তার ২৫ কোটি ডলারও এ মাসেই রিজার্ভে যোগ হবে।
তখন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
কমেন্ট