রেমিটেন্স: উল্লম্ফনে শেষ হলো ২০২৩-২৪ অর্থবছর
সবশেষ জুন মাসে ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের জুনের চেয়ে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে উল্লম্ফন নিয়ে শেষ হলো ২০২৩-২৪ অর্থবছর। রবিবার শেষ হওয়া এই অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার এসেছিল দেশে; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
সবশেষ জুন মাসে ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের জুনের চেয়ে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
২০২০ সালের জুলাই মাসে এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।
গত বছরের জুনে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ (২.২০ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
অর্থবছরের হিসাবেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এক লাফে ৩৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
পরের অর্থবছরে (২০২১-২২) অবশ্য তা কমে ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলারের নেমে আসে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আসে একটু বেশি, ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
কোরবানির ঈদে পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচ মেটাতে বেশি অর্থ দেশে পাঠানোয় জুন মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। এছাড়া টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি রেমিটেন্স বাড়ার আরেকটি কারণ বলে জানান তিনি।
১৭ জুন দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১ হাজার কোটি টাকা।
রেমিটেন্সের এই উল্লম্ফন অর্থনীতির উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ‘গ্রস’ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ২৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বিপিএম-৬ হিসাবে ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বরাবরই দুই ঈদের পর রেমিটেন্সের গতি কমে যায়। কিন্তু এবার দুই ঈদের পর রেমিটেন্স খুব একটা কমেনি।
মে মাসে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত বছরের মে মাসের চেয়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি।
একক মাসের হিসাবে মে মাসের রেমিটেন্স ছিল এতদিন দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার আগের মাস এপ্রিলে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চ মাসে এসেছিল প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার।
তার আগের দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছিল। জানুয়ারিতে এসেছিল ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল আরও বেশি, ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন।
আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে আসে ১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “এমনিতেই বেশ কয়েক মাস ধরে রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। টাকা-ডলারের বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর ফলে ডলারের দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। তার প্রভাব রেমিটেন্সে পড়েছে।”
“এছাড়া কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।”
গত ৯ মে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা-ডলারের বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করেছে। সেই পদ্ধতিতে টাকা-ডলারের বিনিময় হার হবে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা।
অর্থাৎ ব্যাংকগুলো ১১৭ থেকে ১১৮ টাকার মধ্যে রেমিটেন্স সংগ্রহ করতে পারবে। এরসঙ্গে যোগ হবে সরকারের দেওয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনা।
সোমবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১৮ টাকা।
একদিনেই রিজার্ভ বেড়েছে আড়াই বিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক রিজার্ভের সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। একদিনে আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি যোগ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ‘গ্রস’ হিসাবে ছাড়িয়েছে ২৭ বিলিয়ন ডলার।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এ ছাড়া বাজেট সহায়তার ঋণ হিসেবে আসা কোরিয়া সরকার, আইবিআরডি ও আইডিবি থেকে মোট ৯০ কোটি ডলার যোগ হয়েছে রিজার্ভে। একইসঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের একটি অংশও যোগ হয়।
সব মিলিয়ে বিপিএম-৬ হিসাবে বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার এবং ‘গ্রস’ হিসাবে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদনের দুই দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করে আইএমএফ। বিশ্বব্যাংকের ঋণদানকারী শাখা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি)-এর ৫০ কোটি ডলার, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) ৩০ কোটি ডলার এবং কোরিয়া সরকারের বাজেট সহায়তার ১০ কোটি ডলারও পেয়েছে বাংলাদেশ।
নিট রিজার্ভ
বিপিএম-৬ ও ‘গ্রস’ হিসাবের বাইরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না।
বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভ থেকে আকুর দায়, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ এবং আইএমএফের স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) হিসেবে থাকা ডলার বাদ পড়বে। আর এ সব বাবদ বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভ থেকে সাড়ে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে।
এ হিসাবে বাংলাদেশের প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে।
কমেন্ট