১০ মাসে সবচেয়ে কম রেমিটেন্স জুলাইয়ে
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে রেমিটেন্স প্রবাহে আরও পতন দেখা দিয়েছে।
কোটা আন্দোলনের ধাক্কা লেগেছে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিটেন্সে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক দশ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। আর গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে জুলাইয়ে রেমিটেন্স পরিমাণ ২২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ৭২৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
গত বছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীা। এর পরের নয় মাসের পাঁচ মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে দেশে; চার মাস এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি নিয়ে শুরু হয় নতুন অর্থবছর। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে রেমিটেন্স প্রবাহে আরও পতন দেখা দিয়েছে। যদিও আগের মাস জুনে এই সূচকে উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল।
গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার; টাকার হিসাবে ছিল এক হাজার কোটি টাকা।
একক মাসের হিসাবে জুন মাসের রেমিটেন্স ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। গত বছরের জুনের চেয়ে এই বছরের জুনে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি এসেছিল দেশে।
কিন্তু নতুন অর্থবছরের শুরুতে রেমিটেন্স প্রবাহের সেই উল্লম্ফন আর নেই।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে এই ধরনের প্রচারে বিভ্রান্ত না হতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
গত ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলেছে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।
ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ওই দিন লেনদেন চলে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসাও সম্ভব ছিল না। এ সময়ের মধ্যে যারা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, ২৪ জুলাইয়ের পর তা দেশে এসেছে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স প্রবাহে ধস নামে; আসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
এর পরের নয় মাসের পাঁচ মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে দেশে; চার মাস এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার এসেছিল দেশে; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
অর্থবছরের হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে দেশে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এক লাফে ৩৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
পরের অর্থবছরে (২০২১-২২) অবশ্য তা কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আসে একটু বেশি, ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
কমেন্ট