২৪ দিনে এল ২০,৬৪০ কোটি টাকার রেমিটেন্স
মাসের বাকি ৭ দিনে (২৫ থেকে ৩১ আগস্ট) এই হারে এলে মাস শেষে এই অঙ্ক দাঁড়াবে ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২২২ কোটি (২.২২ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিটেন্স প্রবাড় বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টের প্রথম ২৪ দিনে (১ থেকে ২৪ আগস্ট) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৭২ কোটি (১.৭২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭ কোটি ১৬ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ৮৬০ কোটি টাকা।
মাসের বাকি ৭ দিনে (২৫ থেকে ৩১ আগস্ট) এই হারে এলে মাস শেষে এই অঙ্ক দাঁড়াবে ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২২২ কোটি (২.২২ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে যে ধাক্কা লেগেছিল তা কেটে যাচ্ছে; বাড়তে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।
বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দর আরও দুই টাকা বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহে গতি বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা। এছাড়া দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠানোয় রেমিটেন্স বাড়ার একটি কারণ বলে জানিয়েছেন তারা।
গত ২০ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম আরও ২ টাকা বেড়েছে। এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে প্রতি ডলার ১২০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। ব্যাংকগুলোও নগদ ডলার বিক্রিসহ সব ক্ষেত্রেই ১২০ টাকা দরে ডলার লেনদেন করছে।
২০ আগস্টের আগে আন্ত:ব্যাংক লেনদেনসহ সব ক্ষেত্রেই ১১৮ টাকায় ডলার লেনদেন হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম তিন দিনে (১ থেকে ৩ আগস্ট) ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ৪ থেকে ১০ আগস্ট এসেছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে আগস্টের প্রথম ১০ দিনে এসেছে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার।
প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার; টাকার হিসাবে ৫৬৯ কোটি টাকা।
তার পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ১১ থেকে ১৭ আগস্ট এসেছে ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
সবশেষ ১৮ থেকে ২৪ আগস্ট সপ্তাহে এসেছে ৫৮ কোটি ৪১ লাখ ডলার। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ১ হাজার কোটি টাকা।
গত বছরের আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিটেন্স কমেছিল। ওই মাসে ১৯১ কোটি ৩৫ লাখ (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে যা ছিল ৭২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
ওই সময় আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।
ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার; টাকার হিসাবে ছিল এক হাজার কোটি টাকা।
একক মাসের হিসাবে জুন মাসের রেমিটেন্স ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। গত বছরের জুনের চেয়ে এই বছরের জুনে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি এসেছিল দেশে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।
কমেন্ট