৫ দিনে রেমিটেন্স এল ৪২ কোটি ডলার, বাড়ছে রিজার্ভ
মাসের বাকি ২৬ দিনে (৬ থেকে ৩১ অক্টোবর) এই হারে এলে মাস শেষে এই অঙ্ক ২৬৩ কোটি ৩১ লাখ (২.৬৩ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে। একক মাসের হিসাবে যা হবে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমূখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের পর চলতি অক্টোবর মাসেও বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
আর এই রেমিটেন্সের উপর ভর করে রিজার্ভের পতনও ঠেকানো গেছে; বাড়তে শুরু করেছে গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।
বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরের প্রথম পাঁচ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৪২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই রেমিটেন্সের পরিমাণ ৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা এক হাজার ২০ কোটি টাকা।
মাসের বাকি ২৬ দিনে (৬ থেকে ৩১ অক্টোবর) এই হারে এলে মাস শেষে এই অঙ্ক ২৬৩ কোটি ৩১ লাখ (২.৬৩ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে। একক মাসের হিসাবে যা হবে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ডলার; টাকার হিসাবে এসেছিল ৯৬২ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন)।
সব মিলিয়ে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৬.৫৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে যে ধাক্কা লেগেছিল তা কেটে গেছে; এখন প্রতি মাসেই বাড়ছে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
ওই সময় আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।
ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।
রিজার্ভ ১৯.৭৬ কোটি ডলার
এদিকে রেমিটেন্স বাড়ায় রিজার্ভও বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
এক সপ্তাহ আগে ২৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
দুই সপ্তাহ আগে ১৯ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ২০ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ১০ কোটি ডলার।
১৫ দিনের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৩৮ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ২৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভের পাশপাশি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।
সেই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২ সেপ্টম্বর যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তাতে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
গত ৯ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে যায়। আকুর দেনা শোধের আগে ৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
গত ২৯ আগস্ট বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
এক বছর আগে গত বছরের ২ অক্টোর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।
কমেন্ট