ইডিএফ নামল ৪.৬ বিলিয়নে, নিট রিজার্ভ ২৩.২ বিলিয়ন
রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার আরও কমেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে এই তহবিলের আকার আরও ১৭ কোটি ডলার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বর্তমানে এই তহবিলের আকার ৪৬০ কোটি (৪.৬০বিলিয়ন) ডলারে নেমে এসেছে।
আর এর মধ্য দিয়ে নিট বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাকির হাসান চৌধুরী রোববার সন্ধ্যায় এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “ইডিএফের আকার আরও ১৭ কোটি ডলার কমানো হয়েছে। এর ফলে এই তহবিলের আকার দাড়িয়েছে ৪৬০ কোটি (৪.৬ বিলিয়ন) ডলার।”
এর আগে গত মে মাসে ২৩ কোটি ডলার কমিয়ে ৪৭৭ কোটি ডলারে (৪.৭৭ বিলিয়ন) ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছিল। ছয় মাসের ব্যবধানে ইডিএফের আকার ২৪০ কোটি ডলার (২.৪০ বিলিয়ন) কমালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে এই তহবিলের আকার ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। এরপর জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ১ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ৬০০ কোটি করা হয়।
১৯ মার্চে নামিয়ে আনা হয় ৫৫০ কোটি (৫.৫ বিলিয়ন) ডলারে। ২৬ এপ্রিল আরও ৫০ কোটি ডলার কমালে নেমে আসে ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারে। ১৪ মে’তে নামিয়ে আনা হয় ৪৭৭ কোটি (৪.৭৭ বিলিয়ন) ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই ১ তারিখ থেকে জুনের ১ তারিখ) ১২ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ২০২৩ সালের ১ জুন পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়াল ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। এর একদিন আগে ৩১ মে রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৮ টাকা, সর্বনিম্ন ১০৭ টাকা ৬৫ পয়সা।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আইএমএফ বেশ কিছুদিন ধরে ইডিএফের আকার কমাতে বলে আসছিল। সবশেষ গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। এর মধ্যে এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) বা বর্ধিত ঋণ সুবিধা ও এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএএফএফ) বা বর্ধিত তহবিল সুবিধার আওতায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার এবং নতুন গঠিত তহবিল রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় আরও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে।
ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তিন দিন পরই প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ দেবে আইএমএম।
প্রথম কিস্তির ঋণের টাকা কোথায় কীভাবে খরচ হচ্ছে, অর্থনীতিতে তা কী ধরনের প্রভাব পড়েছে তা সরেজমিনে দেখতে এবং দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ ছাড়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল গত ২৪ এপ্রিল ঢাকা সফরে আসে।
ওই সফরে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২ মে তারা ওয়াশিংটন ফিরে যায়। ওই প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করবে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ ছাড়ের বিষয়টি।
বাংলাদেশ আশা করছে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে।
আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠিত ৭ বিলিয়ন ডলার ইডিএফের আকার ধাপে ধাপে কমিয়ে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে এডিএফের এই ৭ বিলিয়ন, আরও কয়েকটি তহবিল ও শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ২০ কোটি ডলার ঋণ এবং দু-তিনটি প্রকল্পে রিজার্ভ থেকে দেয়া ঋণসহ মোট ৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে আলাদা করে নিট রিজার্ভের হিসাব করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ।
কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলেছিল, কোনো দেশের আপৎকালীন সংকট মেটানোর জন্য রিজার্ভ রাখা হয়। কিন্তু এই ৮ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ চাইলেই যখন-তখন খরচ করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
জুন থেকে আইএমএফের শর্ত মেনে নিট রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এসব শর্ত মানতে গিয়েই ইডিএফের আকার কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “রিজার্ভ নিয়ে সরকার চাপে রয়েছে। আইএমএফের শর্ত মোতাবেক রিজার্ভের আকার কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এটি রপ্তানিকারকদের জন্য এ মূহুর্তে একটি কঠিন হয়ে যাবে। তবে ইডিএফের আকার না কমিয়ে কোন উপায় নেই।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রোববার দিন শেষে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের শর্ত মেনে এই রিজার্ভ থেকে ইডিএফের ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন এবং শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ২০ কোটি ডলার ঋণ ও অন্য কয়েকটি প্রকল্পের ঋণ ১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে হিসাব করলে বর্তমানে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
সবশেষ মার্চ মাসে ৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এ হিসাবে বাংলাদেশের যে নিট রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে চার মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
কমেন্ট