জ্বালানি সংকট কাটাতে গ্যাস অনুসন্ধানের তাগিদ
শনিবার ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের (আইসিসিবি) বার্ষিক সভায় বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত
জ্বালানি সংকট কাটাতে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি)।
শনিবার ঢাকায় ব্যবসায়ী সংগঠনটির বার্ষিক সভায় এই তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানি, এলএনজি এবং কয়লার উপর নির্ভরতা বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকি তীব্র হয়েছে। যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং ভর্তুকির বোঝা বাড়াচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব এড়াতে ব্যয়বহুল এলএনজিকে নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য অন-শোর এবং অফ-শোর উভয় অনুসন্ধান কার্যক্রমে দ্রুত অগ্রসর হওয়া উচিত। পাশাপাশি পারমাণবিক এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
সভায় কার্যনির্বাহী বোর্ডের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবির সহসভাপতি এ কে আজাদ, কার্যনির্বাহী বোর্ডের সদস্য তপন চৌধুরী, কুতুব উদ্দিন আহমেদ, আফতাব-উল ইসলাম, আনওয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), ফজলুল হক, নাসের এজাজ বিজয়, ব্যারিষ্টার সামীর সাত্তার, সংগঠনের মহাসচিব আতাউর রহমান প্রমুখ।
আইসিসিবি সভাপতি বলেন, “২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হচ্ছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের বাংলাদেশকে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালন করতে হবে। তাই সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই সুশাসনের দিকে নজর দিতে হবে, যা এখনও বৈশ্বিক সূচকের অনেক নিচে রয়েছে।”
মাহবুবুর রহমান বলেন, “বড় স্বপ্ন পূরণের পেছনে বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলাদেশ বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে করোনা মহামারির সংকট থেকে নিজেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।”
সভায় আইসিসিবি কার্যনির্বাহী বোর্ড অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে প্রধান কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে এবং তা সমাধানের পরামর্শও দিয়েছে।
বোর্ড মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপযুক্ত আর্থিক ও রাজস্ব নীতি থাকা উচিত। পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং আমদানি বৃদ্ধির ফলে ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস (বিওপি) ঘাটতি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার ও পণ্যে বৈচিত্র আনা এবং এশিয়ার প্রধান দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।
আইসিসিবি বোর্ডের মতে, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিছু অনুমান অনুসারে, বাংলাদেশকে বন্দর ও সড়ক নির্মাণ, পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রেললাইন স্থাপন, বিদ্যুৎ-উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা স্থাপন, অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য ইউটিলিটি ও সেবা প্রদান ইত্যাদি খাতে আগামী দশকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।
এছাড়া খরচের পাশাপাশি সময় বাঁচাতে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে এ প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এক মাস বাড়ার ফলে প্রকল্পের ব্যয় দশমিক ৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খরচের পাশাপাশি সময় বাঁচাতে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করে আইসিসিবি।
ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে সভায় বলা হয়, এর পরিমাণ গত ১০ বছরে তিনগুণ হয়েছে। খেলাপি ঋণ সমস্যা মোকাবেলায় ব্যাংকিং খাতে আরও কঠোর ঋণ নীতি এবং তার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
কৃষি খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ৭ কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্যই বিশ্বব্যাপী অভিযোজন প্রযুক্তিগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং জলবায়ু অভিযোজনযোগ্যতার নতুন উদাহরণে আরও মনোনিবেশ করতে হবে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের জাতি স্মার্ট বাংলাদেশ হয়ে উঠবে। যদিও দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মানবসম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদেরকে শিল্পের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কে আইসিসিবি বলেছে, তৈরি পোশাক (আরএমজি), হালকা প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিক্স, চামড়া ও পাদুকা এবং কৃষি-খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো শ্রম-উদ্দীপক শিল্পে কর্মীদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ এ জন্য চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে এবং দক্ষতায়ন ঘাটতি পূরণে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছে।
আইসিসিবির এজিএমে সভায় ২০২২ সালের অডিটর রিপোর্ট অনুমোদন এবং ২০২৩ সালের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ করে।
কমেন্ট