আগামী সপ্তাহেই রিজার্ভে যোগ হচ্ছে ১ বিলিয়ন ডলার

আগামী সপ্তাহেই রিজার্ভে যোগ হচ্ছে ১ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর। আগামী সপ্তাহেই বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে যোগ হচ্ছে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা।

তিনটি উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া যাবে এই ঋণ-সহায়তা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দেবে ৪০ কোটি ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকও (এআইআইবি) দেবে ৪০ কোটি ডলার। আর জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা দেবে ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

সব মিলিয়ে সংস্থা তিনটি ১০১ কোটি ৬০ লাখ (১.০১ বিলিয়ন) ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং এডিবি, এআইআইবি ও জাইকা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক হচ্ছে রিজার্ভ। আমদানি ব্যয় কমার পরও রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।

মঙ্গলবার দিনের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে এই সূচক ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উঠে গিয়েছিল; এক বছর আগেও ছিল ৪২ বিলিয়ন ডলার।

এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে হিসাব করলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ অবশ্য ২৪ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

এই রিজার্ভ নিয়ে বেশ চিন্তার মধ্যে ছিল সরকার। আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্ব ব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার পাওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসা রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল।

কিন্তু রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আশানুরুপ না আসায় সেই রিজার্ভ ফের ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এডিবি, এআইআইবি ও জাইকার ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পাওয়া গেলে রিজার্ভ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক এবং দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। কমতে কমতে রিজার্ভ উদ্বেগজনক অবস্থায় নেমে এসেছে। এ অবস্থায় এই তিন সংস্থার ১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হবে।”

“অন্যদিকে সরকার স্বস্তি পাবে; সাহস পাবে। চাপ বা সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে। তবে আত্মতৃপ্তিতে ভূগলে চলবে না। রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়াতেও জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”

এডিবি

মঙ্গলবার ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবি সদর দপ্তরে সংস্থাটির বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাজেট সহায়তা হিসেবে এই অর্থ দেবে সংস্থাটি।

বুধবার ঢাকায় অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এডিবি ও সরকারের মধ্যে এ বিষয়ে একটি ঋণ চুক্তি সই হবে বলে এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বর জানিয়েছেন।

এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “বুধবার চুক্তি সইয়ের দুই-তিন দিনের মধ্যেই এই ঋণের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে জমা হবে।”

দুই বছরের করোনা মহামারি ধকল কাটতে না কাটতেই এবং এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় সংকটে পড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য এই ঋণ দেয়া হবে বলে এডিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিশেষ করে সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং সরকারি ব্যয়ে দক্ষতা ও উৎপাদশীলতা উন্নত করতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এছাড়া এই ঋণের টাকা ছোট ব্যবসা বিশেষ করে নারী নেতৃত্বাধীন ব্যবসা বিকাশে ব্যয় হবে বলে জানিয়েছে এডিবি।

এই ঋণের অর্থ ‘সাসটেইনেবল ইকোনমিক রিকভারি প্রোগ্রাম’ এর দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হবে। ২০২১ সালের অক্টোবরে কোভিড-১৯ মহামারির পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ সহায়তা দিয়েছিল এডিবি।

সেই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি সম্পন্ন করতে এই ৪০ কোটি ডলার দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে এডিবি।

এডিবির দক্ষিণ এশিয়ার প্রিন্সিপাল পাবলিক ম্যানেজমেন্ট ইকোনমিস্ট আমিনুর রহমান বলেন, “দ্বিতীয় পর্যায়ের এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশকে রাজস্ব বাড়াতে, সরকারি ব্যয় এবং সংগ্রহে দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা উন্নত করতে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর সংস্কারকে আরও গতিশীল করতে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং খাত থেকে কম সুতে ঋণ পেতে এই প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করা হবে।”

এআইআইবি

জানা যায়, বুধবার চীনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এআইআইবির বোর্ড সভায় বাংলাদেশের ৪০ কোটি ঋণ প্রস্তাবটি অনুমোদন হবে। এডিবির মত এই ঋণদাতা সংস্থাটির ঋণও অনুমোদনের তিন-চার দিনের মধ্যে রিজার্ভে জমা হয়।

এআইআইবির এই ঋণও করোনা মহামারি এবং যুদ্ধের ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে ব্যয় করা হবে বলে ইআরডি সূত্রে জানা গেছে।

জাইকা

২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঋণ-সহায়তা দেবে জাইকা। এই ঋণও দু-একদিনের মধ্যে অনুমোদন পাবে সংস্থাটির বোর্ড সভায়। অনুমোদনের পর পরই জাইকার সহায়তার এই অর্থ রিজার্ভে জমা হবে।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এই তিন সংস্থা ঋণের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে জমা হবে।

কমল ভোজ্যতেলের দাম, আরও কমতে পারে

পরবর্তী

কমল ভোজ্যতেলের দাম, আরও কমতে পারে

কমেন্ট