দাতারা ঋণ দিচ্ছে, রিজার্ভ বাড়ছে, সংকট কাটছে

দাতারা ঋণ দিচ্ছে, রিজার্ভ বাড়ছে, সংকট কাটছে

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর। সংকটের এই সময়ে দাতাদের কাছ থেকে একের পর এক কম সুদের ঋণ-সহায়তা মিলছে। এর ফলে বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ দশমিক ৬০ কোটি ডলার দিয়ে শুরু হয়েছিল। এর পর বিশ্ব ব্যাংকের বাজেট সহায়তার ৫০ কোটি ডলার।

তার পর এডিবির বাজেট সহায়তার ৪০ কোটি ডলার এবং এআইআইবির ৪০ কোটি ডলার সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে জমা হয়েছে। আরও কিছু ঋণ-অনুদান এসেছে।

সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি জাপান সরকার দিয়েছে, তার প্রথম কিস্তির ২০ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় এ বিষয়ক ‘এক্সচেঞ্জ অব নোটস’ এ সই করেন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান।

একই অনুষ্ঠানে ঋণ চুক্তিতে সই করেন সচিব শরিফা খান এবং বাংলাদেশে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার (জাইকা) প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে।

জাপান দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাপানি মুদ্রা ইয়েনে দেওয়া ঋণ প্যাকেজের প্রথম কিস্তিতে এই বাজেট সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ইয়েন বা ২০ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

জাপানি এই ঋণের সুদহার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ পরবর্তী ২০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আজ ৪৪শ জাপানি ইয়েন ঋণ প্যাকেজের এক্সচেঞ্জ অব নোটস সই করতে পেরে আমি আনন্দিত। এই প্যাকেজে ‘ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোন ফর স্ট্রেংদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট’ অন্তর্ভূক্ত থাকছে।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে জাপানি প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও নতুন বাজেট সহায়তায় ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার উপর ভিত্তি করে জাপান সরকার মন্ত্রিসভায় খুব দ্রুততার সঙ্গে এই ঋণ অনুমোদন করেছে।”

তিনি বলেন, “আমি আশা করি, এই ঋণ বাংলাদেশকে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উৎরে যেতে এবং দুদেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে।”

অনেক আলোচনার পর গত ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ঋণ অনুমোদনের তিন দিনের মাথায় সংস্থাটি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার অর্থ ছাড় করে।

এর পর ২৩ মে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের ৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার রিজার্ভে জমা হয়।

সংকটের এই সময়ে রিজার্ভ বাড়াতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার; যার সুফলও মিলছে ভালোই।

গত ১৪ ও ১৫ জুন তিন দাতা সংস্থার সঙ্গে কম সুদের প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ চুক্তি সই করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি।

এরমধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঋণের চুক্তি সই হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ৪০ কোটি ডলারের চুক্তি সই হয়েছে। একই দিন একই পরিমাণ (৪০ কোটি ডলার) ঋণের চুক্তি সই হয়েছে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) সঙ্গে।

এই তিন দাতা সংস্থার প্রায় ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ঋণ সোমবার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। আর সে কারণেই রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে।

সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।

তবে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সেরও অবদান রয়েছে। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের ২৫ দিনেই ২০২ কোটি (২.০২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন তারা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি শূন্য আট লাখ ডলার।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে চলতি মাসের এই ২৫ দিনে (১ থেকে ২৫ জুন) এসেছে ২১ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা, প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮৭৭ কোটি টাকা।

২০২২ সালের জুন মাসের এই ২৫ দিনে ১৩০ কোটি (১.৩০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ২৫ দিনে প্রবাসী আয়ে ৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

আর এর মধ্য দিয়ে রিজার্ভে যে চাপ ছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে বলে আশা করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে বলেও আশার কথা শুনিয়েছেন তিনি।

এআরএইচ ডটকমকে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “আমি পরিস্কারভাবে একটা কথা বলতে চাই। আমাদের অর্থনীতিতে চাপ আছে; কিন্তু সংকট নেই। এই চাপ কাটিয়ে উঠতে আমরা নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।”

“তারই অংশ হিসেবে আমরা কম সুদের ঋণের জন্য দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করি। তার সুফল এখন পাচ্ছি। সবার কাছ থেকেই কাঙ্খিত ঋণ-সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে আমাদের রিজার্ভে যে চাপ দেখা দিয়েছিল, তা কেটে যাচ্ছে।”

 

রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক পদক্ষেপ পরবর্তী

রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক পদক্ষেপ

কমেন্ট