বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ২৩.৫৬ বিলিয়ন ডলার

বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ২৩.৫৬ বিলিয়ন ডলার

বুধবার দিন শেষে ‘গ্রস’ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কথামতো বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করল বাংলাদেশ ব্যাংক। 

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম৬ পদ্ধতি অসুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, বুধবার দিন শেষে ‘গ্রস’ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। 

গত মে মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের কম সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। 

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। 

দীর্ঘদিন ধরে আইএমএফ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিপিএম৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) পদ্ধতি অনুসরণ করে   রিজার্ভের হিসাব করতে বাংলাদেশ সরকার তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়ে আসছিল। 

কিন্তু বাংলাদেশ সে বিষয়টি আমলে নেয়নি। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দেয়। সেই ঘাটতি সামাল দিতে গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ পেতে সমঝোতা করে বাংলাদেশ। 

ঋণ সমঝোতার পর আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পরামর্শ আসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। বাংলাদেশ আইএমএফের সেই পরামর্শ মানতে রাজি হয়।

গত ১৮ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, “আইএমএফ সদস্য অন্যান্য দেশগুলো বিপিএম৬-এর ফর্মুলা কার্যকর করেছে। আমরাও সেটা কার্যকর করবো। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবও থাকবে।” 

গভর্নর রউফ তালুকদার বলেন, “আমরা রিজার্ভ থেকে যেসব বিনিয়োগ করেছি সেগুলো ঝুঁকিমুক্ত। আমাদের সব ঋণের গ্যারান্টার রয়েছে। সব টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত পাবে। শ্রীলংকার লোনও আমরা ফেরত পেতে পারি তাদের স্থানীয় মুদ্রায় সমন্বয়ের মাধ্যমে।” 

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক মোট রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করে আসছিল। কিন্তু বেশ কিছুদের ধরে আইএমএফ এই হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাদের যুক্তি, বাংলাদেশ ব্যাংক মোট যে রিজার্ভের হিসাব দিচ্ছে, তাতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), শ্রীলঙ্কাতে দেওয়া ২০ কোটি ডলার ঋণসহ অন্য কয়েকটি প্রকল্পে বিনিয়োগকে অন্তর্ভুক্ত দেখানো হচ্ছে। 

আইএমএফ বলছে, এটা রিজার্ভের নিট বা প্রকৃত হিসাব নয়। কেননা, এই মুহূর্তে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভ থেকে যে অর্থ অন্য খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে বা ঋণ দেয়া হয়েছে, তা ব্যবহার করতে পারবে না। 

আপৎকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য রিজার্ভের যে অর্থ তাৎক্ষনিক খরচ করা যাবে সেটাকেই প্রকৃত রিজার্ভ হিসেবে হিসাব করতে বলে আসছিল আইএমএফ। 

এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি আমলে না নিলেও ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্তের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ায় আইএমএফের এই শর্তটি এখন বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হচ্ছে সরকারকে। 

আইএমএফের ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে মানতে হবে ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এবং ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) ফর্মুলা। 

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো নিয়ে সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করে তাতে ‘গ্রস রিজার্ভ’ এবং ‘বিপিএম-৬ ফর্মুলা অনুসরণ করে রিজার্ভ’- দুই ধরনের তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে। 

তাতে দেখা যায়, বুধবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ ফর্মুলার হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। 

প্রথমবারের মতো একসঙ্গে রিজার্ভের এই দুই ধরনের তথ্য প্রকাশ করল বাংলাদেশ ব্যাংক। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের  ‘গ্রস’ হিসাবের ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে ইডিএফ তহবিল, শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার এবং কয়েকটি প্রকল্পে দেওয়া ঋণসহ ৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে বিপিএম-৬ ফর্মুলা অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৩  দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আমরাও দীর্ঘদিন ধরে রিজার্ভের প্রকৃত তথ্য প্রকাশের কথা বলে আসছি। যাইহোক শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ ফর্মুলা অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ শুরু করল। এতে এখনই প্রয়োজন হলে কয় মাসের পণ্য আমদানির রিজার্ভ আছে, তার একটা পরিস্কার ধারনা পাওয়া যাবে।”

“আইএমএফের ঋণের অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল এটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেহেতু  আইএমএফের শর্ত পূরণ করে রিজার্ভ তথ্য প্রকাশ করা শুরু করেছে, সে কারণে সংস্থাটির দ্বিতীয় কিস্তির ৬০ কোটি ডলার পেতে সমস্যা হবে না বলে মনে হচ্ছে।” 

তিনি বলেন, “আশার কথা হচ্ছে কোরবানির ঈদের কারণে জুন মাসে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। রপ্তানি আয়ও ওই মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সে কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ‘গ্রস’ রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠেছিল। আকুর বিল শোধের পর তা আবার ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।” 

“এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে রিজার্ভ যাতে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে না নামে আর আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ হিসাবে ২৫ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান কারে-সেটা নিশ্চিত করতে হবে।” 

“আর এ জন্য রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ানোর পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কম সুদের ঋণ-সহায়তার পাওয়ার জন্যও জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে,” দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান মনসুর।

রিজার্ভ থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ডলার বিক্রি পরবর্তী

রিজার্ভ থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ডলার বিক্রি

কমেন্ট