এক মাসেই রিজার্ভ থেকে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

এক মাসেই রিজার্ভ থেকে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

মঙ্গলবারও রিজার্ভ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৬ কোটি ৮৬ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চাহিদার কারণে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখা হয়েছে। 

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সব মিলিয়ে ১১৪ কোটি ৭০ লাখ (প্রায় ১.১৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে। মঙ্গলবারও রিজার্ভ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৬ কোটি ৮৬ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর আরও ৫০ পয়সা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার থেকে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এতদিন দর ছিল ১০৯ টাকা। 

তবে সব ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে না। সরকারের প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। 

৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার বিক্রির পর মঙ্গলবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) বিক্রি করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। 

করোনা মহামারির কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় এবং রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৯ টাকা, সর্বনিম্নও ১০৯ টাকা। সব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভ আরও কমে যাবে। সেজন্য সরকারের প্রয়োজনেই শুধু রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়া হচ্ছে।

আন্তব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে সব ব্যাংকই বর্তমানে ভাসমান বিনিময় দর অনুসরণ করছে। তবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে নিজেদের নির্ধারিত আলাদা দর অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাকে বলা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট’। 

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করত, সেটিকে ‘ইন্টার ব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট’ বা আন্তব্যাংক লেনদেন হার নামে অভিহিত করা হতো। ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দরে ডলার বিক্রি করত, তখন সেই দরকেই ডলার রেট ধরা হতো। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়।  

পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। এর পর থেকে এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এই দুই সংগঠন। 

সোমবার এবিবি ও বাফেদার বৈঠকে রপ্তানি আয়ে ডলারের দর ১ টাকা বাড়ানো হয়েছে; রেমিটেন্স    বাড়ানো হয়েছে  ৫০ পয়সা। সে স্ধিান্তের আলোকে মঙ্গলবার থেকে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দর হবে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। আর রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে হবে ১০৯ টাকা।  

আর আমদানি নিষ্পত্তিতেও ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে।

তবে, এবিবি ও বাফেদার সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই মানেনি ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক এই দুই সংগঠনের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করেছে। এজন্য কয়েক দফায় কয়েকটি ব্যাংককে সতর্ক করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, আমদানির ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ডলারের দামে বেশি রাখছে ব্যাংকগুলো। 

একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান নাম না প্রকাশ করার শর্তে এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ ডলার চাওয়া হয় তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পাওয়া যায়। দেড় বছর ধরে এই সংকট চলছে দেশে।” 

তবে,বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার-সংকট যতটা প্রকট ছিল, তা অনেকটা কমে এসেছে। আমদানি ঋণপত্র খোলা কমে গেছে। তাতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের মজুত কিছুটা বেড়েছে।  

এর আগে গত মাসের বৈঠকে আন্তঃব্যাংক ডলারের দাম ১০৯ টাকার বেশি হওয়া যাবে না বলে একটি নতুন নিয়ম করা হয়েছিল। তার পর থেকে অবশ্য আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে ডলারের দর ১০৯ টাকার উপরে উঠেছি; ১০৯ টাকাতেই ‘স্থির’ রয়েছে ডলারের দর।  

এদিকে জুলাই থেকে রিজার্ভ থেকে আর কম দামে ডলার বিক্রি করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের দরেই  ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

সব ক্ষেত্রে ডলারের এক দর নির্ধারণের লক্ষেই এ সব করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়ে এবিবির চেয়ারম্যান ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “রপ্তানি উৎসাহিত করতে ডলারের বিনিময় হার বাড়ানো হয়েছে। রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলারের ক্রয়মূল্যের ব্যবধান কমে এসেছে।' 

'আমরা ধীরে ধীরে ডলারের অভিন্ন বিনিময় হারের দিকে যাচ্ছি।”

রিজার্ভ কমছেই, দুই সপ্তাহে কমেছে ৩০ কোটি ডলার পরবর্তী

রিজার্ভ কমছেই, দুই সপ্তাহে কমেছে ৩০ কোটি ডলার

কমেন্ট