গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণ কমেছে ১১.৪৪ শতাংশ

গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণ কমেছে ১১.৪৪ শতাংশ

সংকটে পড়ে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে জরুরি ঋণ-সহায়তা চেয়েছিল সরকার। তাতে বেশ সাড়াও মিলেছে। অর্থবছরের শেষ মাস জুনেই ২০৮ কোটি ৯০ লাখ (২.৯ বিলিয়ন) ডলার পাওয়া গেছে। তারপরও অর্থবছর শেষে আগের অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ ঋণ কম এসেছে।

দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই দেড় বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। আর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ এখন ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।   

এই চাপ সামাল দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এখন বিদেশি ঋণ-সহায়তা। কিন্তু কম সুদের এই ঋণ প্রবাহে দৈন্যদশা দেখা দিয়েছে। দেশে বিদেশি মুদ্রার সংকটের মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমায় সংকট কাটাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশক মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে মোট ৮৬৮ কোটি ৯০ লাখ (৮.৬৯ বিলিয়ন) ডলার ঋণ দিয়েছে। 

এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে ৯৮১ কোটি ১০ লাখ (৯.৮১ বিলিয়ন) ডলার অর্থায়ন করেছিল দাতারা। 

সংকটে পড়ে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে জরুরি ঋণ-সহায়তা চেয়েছিল সরকার। তাতে বেশ সাড়াও মিলেছে। অর্থবছরের শেষ মাস জুনেই ২০৮ কোটি ৯০ লাখ (২.৯ বিলিয়ন) ডলার পাওয়া গেছে। তারপরও অর্থবছর শেষে আগের অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ ঋণ কম এসেছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে দাতারা ৬৬০ কোটি (৬.৬০ বিলিয়ন) ডলার ঋণ ছাড় করেছিল। জুন মাস শেষে অর্থাৎ অর্থবছর শেষে সেই ছাড়ের অঙ্ক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বেড়ে ৮ দশমিক ৬৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। 

রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্সের পর বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের অন্যতম উৎস হচ্ছে বিদেশি ঋণ-সহায়তা। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিদেশি ঋণ কমে যাওয়া মানে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। 

 গত শেষ দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।   

এক বছর আগে ‘গ্রস’ রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

গত ১৩ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম৬ পদ্ধতি অসুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।    

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আশার কথা হচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি আয় বাড়ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহও মন্দ নয়। এই দুই সূচক যদি না বাড়ত, আর আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি এবং গত অর্থবছরের শেষ দিকে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবি’র ঋণ না পাওয়া যেতো, তাহলে কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যেত।” 

“সে কারণে রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ অন্য দাতাদের কাছ থেকে ঋণসহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। যেসব ঋণ পাইপলাইনে আটকে আছে, সেগুলো দ্রুত ছাড় করাতে দাতাদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে হবে।” 

“এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে, রিজার্ভ যেনো কোনো অবস্থাতেই আর না কমে। সেজন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে,” বলেন দীর্ঘদিন আইএমফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান মনসুর। 

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের ওই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল। 

কিন্তু গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকেই সেই জোয়ার ছিল না। 

গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণ কমার কারণ ব্যাখ্যা করে আহসান মনসুর বলেন, “দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা মহামারি করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ঋণ-সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন তো আর কোভিডের ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। অস্থির বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিতে হচ্ছে দাতা সংস্থাগুলোকে। সে কারণেই বিদেশি ঋণ কমেছে।” 

২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার। 

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার। 

এক মাসেই রিজার্ভ থেকে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি পরবর্তী

এক মাসেই রিজার্ভ থেকে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

কমেন্ট