রিজার্ভ কমছেই, এক সপ্তাহে কমেছে ৩০ কোটি ডলার
বুধবার দিনের শুরুতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৭ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলারে।
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও কমেছে।
বুধবার দিনের শুরুতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৭ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলারে।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে এক সপ্তাহে বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৩০ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ২৮ কোটি ডলার।
দুই সপ্তাহ আগে ১৪ সেপ্টেম্বর বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।
৭ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ২১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে।
গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম৬ পদ্ধতি অসুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই দিন ‘গ্রস’রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
এর পর থেকে রিজার্ভ কমছেই। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, গত আড়াই মাসে ‘গ্রস’ রিজার্ভ কমেছে ২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ পদ্ধতির হিসাবে কমেছে ২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
সবশেষ গত জুলাই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বর্তমানের ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে চার মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
আমদানি ব্যয়ে ধারগতির পরও রিজার্ভ বাড়ছে না; উল্টো কমছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ধস এবং জ্বালানি তেল, সার, খাদ্যপণ্যসহ সরকারের অন্যান্য আমদানি খরচ মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণেই রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। এই রেমিটেন্স বাড়ায় কোরবানির ঈদের আগে ‘গ্রস’রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল।
কিন্তু জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আকু মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এরপর থেকে কমছেই।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। মহাসংকটে পড়ায় শ্রীলঙ্কা অবশ্য আকুর থেকে বেরিয়ে এসেছে।
দীর্ঘদিন ধরে আইএমএফ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিপিএম৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) পদ্ধতি অনুসরণ করে রিজার্ভের হিসাব করতে বাংলাদেশ সরকার তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়ে আসছিল।
কিন্তু বাংলাদেশ সে বিষয়টি আমলে নেয়নি। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দেয়। সেই ঘাটতি সামাল দিতে গত জানুয়ারিতে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ পেতে সমঝোতা করে বাংলাদেশ।
ঋণ সমঝোতার পর আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পরামর্শ আসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
বাাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের সেই শর্ত বা পরামর্শ মেনেই এখন রিজার্ভের দুই ধরনের তথ্যই প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে।
এরপর থেকে আবার ধারাবাহিকভাবে কমছে। এক বছর আগে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।
তখন বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হতো না।
৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি
এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘অস্থির’ ডলারের বাজার ‘সুস্থির’ করতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।
সেই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দুই মাস ২৬ দিনে (১ জুলাই থেকে ২১ সেপ্টেম্বর) রিজার্ভ থেকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আর এই বিক্রি রিজার্ভ কমার একটি কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
রেমিটেন্স কমছেই
রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ধস নেমেছে।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। এই অঙ্ক গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি (১.৫৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও কমেছে। এই মাসের ২২ দিনে (১ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ (১.০৫ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।
এই ২২ দিনে যে রেমিটেন্স এসেছে, মাসের বাকি ৮ দিনে সেই হারে রেমিটেন্স আসলে মাস শেষে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ১৪৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
সে হিসাবে আগস্টের চেয়েও সেপ্টেম্বরে কম রেমিটেন্স আসবে। আর সেটা হবে দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেড় বিলিয়ন ডলারের কম, ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
কমেন্ট