নিট রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়নের কম: জাহিদ হোসেন
জাহিদ হোসেন বলেন, “দেশে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকছে এবং যা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার প্রকৃত হিসাব মিলছে না। ব্যালান্স অব পেমেন্টে বা লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে। দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট মজুত কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে।" ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
বুধবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের (আইবিএফবি) বার্ষিক সম্মেলনে এ তথ্য দিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “দেশে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকছে এবং যা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার প্রকৃত হিসাব মিলছে না। ব্যালান্স অব পেমেন্টে বা লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে। দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট মজুত কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
দেশের সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার একটি কারণ বহিস্থ বলে উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন বলেন, “এই বহিস্থ কারণের বড় দিক হচ্ছে ডলারের দাম। ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান ২০২১ সালেও ১০০-এর নিচে ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তা ১০০-এর ওপরে চলে যায়। এখন কিছুটা কমলেও এখনো তা ১০০-এর ওপরে রয়েছে।”
তিনি বলেন, “দেশে কত বিদেশি মুদ্রা ঢুকছে এবং কত মুদ্রা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার হিসাব রিজার্ভ দিয়ে মিলছে না। সাধারণত এই হিসাব কখনো ধনাত্মক, আবার কখনো ঋণাত্মক। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এই হিসাব বেশ কিছুদিন ধরে ঋণাত্মক।"
“এর অর্থ হলো-আমাদের জানার বাইরে কিছু একটা ঘটছে।”
“বিশ্ববাজারে তেলের দাম এবং ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।”
জাহিদ হোসেন মনে করেন, সে কারণে অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, এতে যেমন বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার কমছে, তেমনি রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এসব কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম ৬-এর সংজ্ঞা অনুসারে বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
অনুষ্ঠানে জাহিদ হোসেন আরও বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার পেছনে বৈশ্বিক কারণের সঙ্গে দেশীয় কারণও আছে। সেটা হলো সরকারের নীতি পরিবর্তন।
তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের অগতানুগতিক নীতির কারণে গত ২৪ মাস বা ২ বছরে প্রতি মাসে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার করে রিজার্ভ কমেছে। ২০২২ সাল থেকে দেশে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহও কমছে। ২০২২ সালে যেখানে মাসে ২০০ কোটি ডলার আসত, সেখানে ২০২৩ সালে দেশে প্রতি মাসে গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
গত বুধবার রিজার্ভের সবশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বাংলাদেশ। তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৭ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলারে।
অনুষ্ঠানে মুদ্রার বিনিময় হার সম্পর্কে জাহিদ হোসেন বলেন, বাজারে বিদেশি মুদ্রা চাহিবামাত্র পাওয়া না গেলে মুদ্রার প্রতিযোগিতামূলক, বাজারভিত্তিক, নমনীয় ও একক বিনিময় হার নির্ধারণ করেও লাভ হবে না।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির সমালোচনা করেন জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি একটি ‘অনন্য’ মুদ্রানীতি। এ কারণে এটি ‘অনন্য’ যে এটি একদিক থেকে সংকোচনমূলক, আরেক দিক থেকে সম্প্রসারণমূলক। এটা কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। আবার বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমলেও সরকারের ঋণ বাড়ছে।”
সেই সঙ্গে তেলের বাড়তি দামের বিষয়টিও উল্লেখ করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক এই মুখ্য অর্থনীতিবিদ। এ কারণেও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, গত এক দশক ধরে দুটি দেশ অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রগতি করেছে। পারস্পরিক সহযোগিতা বাণিজ্য ও ব্যবসা বৃদ্ধির একমাত্র উপায়।
আইবিএফবি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পারস্পরিক ব্যবসায় অন্বেষণ করার অনেক উপায় রয়েছে। বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক ইস্যুতে ভারত কয়েক দশক ধরে অনেক সমর্থন দিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে প্রথমে ভিসা নীতি সংশোধন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইবিএফবির সভাপতি ও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশীদ।
কমেন্ট