২১ বিলিয়নের নিচে নামল রিজার্ভ

২১ বিলিয়নের নিচে নামল রিজার্ভ

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাওয়া যাবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। এতে স্বস্তি ফিরে পেয়েছে সরকার।

কিন্তু এরই মধ্যে বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের নিচে—২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর ‘গ্রস’ হিসাবে নেমেছে ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে।

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে এক সপ্তাহে বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১২ কোটি ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ১৬ কোটি ডলার।

প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর সঙ্গে রিজার্ভের তথ্যও প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তাতে দেখা যায়, এক মাস আগে ২০ সেপ্টেম্বর বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

দুই মাস আগে ২৩ আগস্ট বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

তিন মাস আগে ২০ জুলাই বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন মাসে বিপিএম৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমেছে আড়াই বিলিয়ন বা ২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।

৭ সেপ্টেম্বর আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ ২১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে।

গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম৬ পদ্ধতি অসুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ওই দিন ‘গ্রস’রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

এর পর থেকে রিজার্ভ কমছেই। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করার পর বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ২ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

সবশেষ গত আগস্ট মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বর্তমানের ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

আমদানি ব্যয়ে ধারগতির পরও রিজার্ভ বাড়ছে না; উল্টো কমছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ধস এবং জ্বালানি তেল, সার, খাদ্যপণ্যসহ সরকারের অন্যান্য আমদানি খরচ মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণেই রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। এই রেমিটেন্স বাড়ায় কোরবানির ঈদের আগে ‘গ্রস’রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল।

কিন্তু জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এরপর থেকে কমছেই।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

মহাসংকটে পড়ায় শ্রীলঙ্কা অবশ্য আকুর থেকে বেরিয়ে এসেছে।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমে আসবে হিসাব বলছে।

দীর্ঘদিন ধরে আইএমএফ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিপিএম৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) পদ্ধতি অনুসরণ করে রিজার্ভের হিসাব করতে বাংলাদেশ সরকার তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়ে আসছিল।

কিন্তু বাংলাদেশ সে বিষয়টি আমলে নেয়নি। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দেয়। সেই ঘাটতি সামাল দিতে গত জানুয়ারিতে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ পেতে সমঝোতা করে বাংলাদেশ।

ঋণ সমঝোতার পর আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পরামর্শ আসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

বাাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের সেই শর্ত বা পরামর্শ মেনেই এখন রিজার্ভের দুই ধরনের তথ্যই প্রকাশ করছে।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে।

এরপর থেকে আবার ধারাবাহিকভাবে কমছে। এক বছর আগে গত বছরের ১৮ অক্টোবর রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার।

তখন বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত না বাংলাদেশ ব্যাংক।

রপ্তানি আয় পুরোটা দেশে আনছেন না রপ্তানিকারকরা পরবর্তী

রপ্তানি আয় পুরোটা দেশে আনছেন না রপ্তানিকারকরা

কমেন্ট