ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৯.৪০ বিলিয়ন ডলার

ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৯.৪০ বিলিয়ন ডলার

এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। সাত দিনে কমেছে ১২ কোটি ডলার।

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক এখন বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। এই সূচক আরও কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। সাত দিনে কমেছে ১২ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ দাবি করছে।

এক সপ্তাহ আগে ২২ নভেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।

বুধবার (২৯ নভেম্বর) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ‘গ্রস’ হিসাবে কমে ২৫ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলারের নেমেছে।

এ হিসাবে এক সপ্তাহে ‘গ্রস’ রিজার্ভ কমেছে ১৪ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর পাশপাশি রিজার্ভের এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এই তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ওই দিন ‘গ্রস’ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশের পর গত সাড়ে চার মাসে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার।

১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

এর পর থেকে কমছেই। এক বছর আগে গত বছরের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে এক বছরে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে রিজার্ভের তথ্য নিয়ে দেশে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ঢাকার প্রথমসারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো ‘ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

তবে রিজার্ভের এই হিসাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রিজার্ভের এই তথ্য সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ‘গ্রস’ বা মোট রিজার্ভ স্থানীয় বিনিয়োগসহ হিসাব করা হয়। অপরদিকে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী স্থানীয় বিনিয়োগ ব্যতীত হিসাব করা হয়। বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করা রিজার্ভ তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য ও ‘গ্রস’রিজার্ভ বিনিয়োগ আদায় সাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য।

“বিপিএম-৬ অনুযায়ী প্রদর্শিত সম্পূর্ণ রিজার্ভই ব্যবহারযোগ্য।”

প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবিষ্যতে জনমনে বিভ্রান্তি এড়াতে ‘গ্রস’ ও বিপিএম-৬ রিজার্ভ হিসাবের তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে অধিকতর সতকর্তা অবলম্বন করতে দেশের সব গণমাধ্যমকে আহ্বান জানিয়েছে।

গত ৮ নভেম্বর রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ নামে ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

আমদানি ব্যয়ে ধারগতির পরও রিজার্ভ বাড়ছে না; উল্টো কমছে। প্রবাসীদের পাঠানো রপ্তানি আয়ে ধস এবং জ্বালানি তেল, সার, খাদ্যপণ্যসহ সরকারের অন্যান্য আমদানি খরচ মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণেই রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স। অক্টোবরে মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়লেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) হিসাবে রেমিটেন্স কমেছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে কিন্তু চার মাসের কম সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। আমদানি বেড়ে যদি ৬ বিলিয়ন হয়, তাহলে কিন্তু ৩ মাসের কিছু বেশি সময়ের খরচ মিটবে। তার মানে আমাদের রিজার্ভ কিন্তু উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে।”

“রিজার্ভ যেনো আর না কমে—সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমরা বার বার সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়ে আসছিলাম। গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেও অনুরোধ করেছিলাম।”

“কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। রিজার্ভ কমছেই। রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার নামা কিন্তু একটি স্পর্শকাতর মানদণ্ড।”

এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ৯ বিলিয়ন ডলার পরবর্তী

এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ৯ বিলিয়ন ডলার

কমেন্ট