রিজার্ভ আর কমবে না, বাড়বে: বাংলাদেশ ব্যাংক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বহুল প্রতিক্ষিত দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার পাওয়ার পর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে সন্তোষ প্রকাশ করে এ আশার কথা শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আর কমবে না, উল্টো বাড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বহুল প্রতিক্ষিত দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার পাওয়ার পর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে সন্তোষ প্রকাশ করে এ আশার কথা শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য প্রতিশ্রুত মোট ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার অনুমোদন করেছে আইএমএফ। শুক্রবারের মধ্যে এ অর্থ আমাদের রিজার্ভে যোগ হবে।”
“এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৪০ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ার একটা ফান্ড থেকে ৯ কোটি ডলারসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে আরও ৬২ কোটি ডলার আসবে।”
গত ৮ ডিসেম্বর ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এডিবির বোর্ড সভায় ৪০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। ১১ ডিসেম্বর রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এই ঋণের চুক্তি সই হয়েছে।
এডিবিরি পক্ষে কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং ও সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী চুক্তিতে সই করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুধবার সন্ধ্যায় ইআরডির সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এডিবির ৪০ কোটি ডলার বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, সব মিলিয়ে চলতি ডিসেম্বর মাসে রিজার্ভে ১৩১ কোটি (১.৩১ বিলিয়ন) ডলার যোগ হবে।
তিনি জানান, দেশে এখন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ আছে ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
মেজবাউল হক বলেন, রেমিটেন্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ডলারের দর ৭৫ পয়সা কমেছে। আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
“সব মিলিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারের কাছিকাছি গিয়ে পৌঁছবে। তাতে ডলার সংকট অনেকটাই কেটে যাবে; অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে।”
“অক্টোবর, নভেম্বরের মতো চলতি ডিসেম্বর মাসেও রেমিট্যান্সসহ ডলার আসার প্রবাহ ইতিবাচক রয়েছে। সঙ্গে দাতা সংস্থার ঋণ যোগ হচ্ছে। কিছু খরচ হবে, তবে আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হবে।”
“তাই রিজার্ভ কমার কারণ নেই। উল্টো বাড়বে। তবে জানুয়ারিতে আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের পেমেন্ট আছে ১ বিলিয়নের (১০০ কোটি) মতো। তারপরও সব মিলিয়ে রিজার্ভ ভালো হবে বলা যায়।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ দাবি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির সদর দপ্তরে মঙ্গলবার আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার অনুমোদন দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। অনুমোদনের দুই দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করে সংস্থাটি; যোগ হয় রিজার্ভে।
গত অক্টোবরে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনার পর আইএমএফ বোর্ডের কাছে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রস্তাব উপস্থাপন করে। মঙ্গলবার সেই প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
কমেন্ট