আইএমএফ ও এডিবির ঋণে রিজার্ভ বেড়ে ২০.৪১ বিলিয়ন ডলার
গত অক্টোবর মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৫২বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বিপিএম-৬ হিসাবের ২০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর। অর্থনীতির যে সূচক নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আলোচনা ছিল; সেই সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়ে ২০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বহুল প্রতিক্ষিত দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার এবং ম্যালিাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪০ কোটি ডলার যোগ হওয়ার রিজার্ভ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ও এডিরির একটি ঋণের ৪০ কোটি ডলার এসেছে। গত বৃহস্পতিবার এ অর্থ রিজার্ভের যুক্ত হয়েছে। এই দুই সংস্থার ঋণ পাওয়ায় আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। আর ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফ ও এডিবি’র ঋণ যোগ হওয়ার আগে রিজার্ভ ছিল বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।
সবশেষ গত অক্টোবর মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৫২বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বিপিএম-৬ হিসাবের ২০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, রেমিটেন্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ডলারের দর ১ টাকা কমেছে। আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একটা ফান্ড থেকে ৯ কোটি ডলারসহ অন্য দাতা সংস্থা থেকে আরও ৬২ কোটি ডলার কিছুদিনের মধ্যেই রিজার্ভে যোগ হবে।
“সব মিলিয়ে চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারের কাছিকাছি গিয়ে পৌঁছবে। তাতে ডলার সংকট অনেকটাই কেটে যাবে; অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে।”
“অক্টোবর, নভেম্বরের মতো চলতি ডিসেম্বর মাসেও রেমিটেন্সসহ ডলার আসার প্রবাহ ইতিবাচক রয়েছে। সঙ্গে দাতা সংস্থার ঋণ যোগ হচ্ছে। কিছু খরচ হবে, তবে আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হবে।
“তাই রিজার্ভ কমার কারণ নেই। উল্টো বাড়বে। তবে জানুয়ারিতে আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের পেমেন্ট আছে ১ বিলিয়নের (১০০ কোটি) মতো। তারপরও সব মিলিয়ে রিজার্ভ ভালো হবে বলা যায়।”
চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। অনুমোদনের দুই দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করে সংস্থাটি; যোগ হয় রিজার্ভে।
গত ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফের সদর দপ্তরে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার অনুমোদন দেওয়া হয়। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) এই অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভে জমা হয়।
অন্যদিকে গত ৮ এডিবির বোর্ড সভায় ৪০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। ১১ ডিসেম্বর রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এই ঋণের চুক্তি সই হয়। বৃহস্পতিবার রিজার্ভে জমা হয় সেই ঋণ।
গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই দিন ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র ‘গ্রস’হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
এর পর থেকে কমছিল। এক বছর আগে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
কমেন্ট