রিজার্ভ আরও বেড়েছে, গ্রস হিসাবে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
মঙ্গলবার দিন শেষে বিপিএম-৬ হিসাবে হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২৭ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর। অর্থনীতির যে সূচক নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আলোচনা ছিল—সেই সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়ছেই। চার দিনের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে ৪০ কোটি ডলার।
মঙ্গলবার দিন শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২৭ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক রিজার্ভের এই তথ্য জানিয়ে এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “রিজার্ভ উর্ধ্বমূখী ধারায় রয়েছে। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় ডলারের জোগান বেড়েছে; সংকট কেটে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ডলারের দর ১ টাকা কমেছে।”
রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বেড়েছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসছে বলে মনে করেন মেজবাউল হক।
বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে একই মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৫৩০ কোটি ৮১ লাখ (৫.৩১ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। একক মাসের হিসাবে এই আয় এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি; আর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ (৬.৩৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার সকালে রেমিটেন্সের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। বিকেলে রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি।
চার দিন আগে ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।
তার এক সপ্তাহ আগে ২১ ডিসেম্বর রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ১০ দিনের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বহুল প্রতিক্ষিত দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার, ম্যালিাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৯ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় রিজার্ভ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।
এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ডলার কেনার ফলে রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মেজবাউল হক বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়ত ব্যাংকগুলোকে ডলার সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। আবার কিছু ব্যাংক থেকে ডলার কেনা হচ্ছে। গত সপ্তাহে কয়েকটি ব্যাংক থেকেই ডলার কেনা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও আরও কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ডলার কেনা হয়েছে।”
“বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের বেশি ডলার রয়েছে; তাই তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।
সবশেষ গত অক্টোবর মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৫২বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’২১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
আইএমএফ, এডিবি ও দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ যোগ হওয়ার আগে গত ১৩ ডিসেম্বর ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ১৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। অনুমোদনের দুই দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করে সংস্থাটি; যোগ হয় রিজার্ভে।
গত ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফের সদর দপ্তরে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর ওই অর্থ রিজার্ভে জমা হয়।
অন্যদিকে গত ৮ এডিবির বোর্ড সভায় ৪০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার একটি ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৪ ডিসেম্বর রিজার্ভে জমা হয় সেই ঋণ।
এছাড়া জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ৯ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সাবপ্রোগ্রাম-১) নামের একটি কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এই ঋণ গ্রহণ করা হলেও বাজেট সহায়তা হিসেবে এই অর্থ একসঙ্গে ছাড় হয়ে রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে।
কমেন্ট