এ বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘দুঃখজনক’ রেকর্ড হবে: বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্টে বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
কেমন যাবে ২০২৪ সালের বিশ্ব অর্থনীতি—তা নিয়ে হতাশার কথা শুনিয়েছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতি একটি ‘দুঃখজনক’ রেকর্ড তৈরি করবে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্থরগতি দেখা যাবে। টানা তৃতীয় বছরের মতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে। এ বছর ২ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের ২ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ২০১০ এর দশকের গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কম।
প্রত্যাশা করা হয়েছিল এই দশক বিশ্বের উন্নয়নের জন্য একটি ‘রূপান্তরমূলক’ দশক হিসেবে আলো ছড়াবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। ২০২৪ সালে শেষে অর্থাৎ এই দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে বিশ্ব অর্থনীতি একটি ‘দুঃখজনক’ রেকর্ড তৈরি করবে। আর সেটি হলো ৩০ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে মন্থর অর্ধ দশক শেষ হবে ২০২৪ সালে।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্টে বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি একাধিক চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতি এক বছর আগের তুলনায় ভালো অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির শক্তির কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার ঝুঁকি কমে গেছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নতুন স্বল্পমেয়াদে বিপদ তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিশ্বের অন্য বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতিতে মন্থর প্রবৃদ্ধি, বিশ্ব বাণিজ্য সংকুচিত হয়ে যাওয়া এবং কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন আর্থিক অবস্থার মধ্যে মধ্যমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি অনেক উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য অন্ধকার হয়ে গেছে।
২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য বৃদ্ধি করোনা মহামারির আগের দশকের গড়ের অর্ধেক হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য ঋণ নেওয়ার খরচ—বিশেষ করে দুর্বল ক্রেডিট রেটিং-এর জন্য মূল্যস্ফীতি-সামঞ্জস্যপূর্ণ শর্তে চার দশকের উচ্চতায় আটকে থাকা বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি টানা তৃতীয় বছরের জন্য মন্থর হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। গত বছরের ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। যা ২০১০-এর দশকের গড় থেকে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কম।
উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে মাত্র ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। যা আগের দশকের গড় থেকে এক শতাংশেরও কম। গত বছর একটি হতাশাজনক বছরের পর নিম্ন আয়ের দেশগুলো প্রত্যাশার তুলনায় ভালো করবে; ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাবে।
২০২৪ সালের শেষ নাগাদ প্রতি চারটি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে প্রায় একটি এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ২০১৯ সালের করোনা মহামারির আগের চেয়ে আরও দরিদ্র থাকবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইনদারমিট গিল বলেছেন, "মনে হচ্ছে কোনও বড় সাফল্য ছাড়াই ২০২০-এর দশক বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘দুর্বল’ বা ‘খারাপ’ দশক হিসেবে নিচের দিকে নেমে যাবে। স্বল্প মেয়াদেও প্রবৃদ্ধি কম অর্জিত হবে। অনেক উন্নয়নশীল দেশকে, বিশেষ করে সবচেয়ে দরিদ্রকে ফাঁদে আটকে রাখবে।”
“এটি অনেক বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। তবে এই দুরাবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠার সুযোগ এখনও আছে। যা প্রতিবেদনে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।”
“যদি সরকারগুলো এখন বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করতে এবং রাজস্ব নীতি কাঠামোকে শক্তিশালী করতে কাজ করে তাহলে একটা ভালো কিছু বের হয়ে আসতে পারে,” বলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ।
প্রতিবেদনে সব দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ( ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন) বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন) তা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জিত হবে।
গত বছরের ৩ অক্টোবর প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে একই পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
কমেন্ট