সুখবর, রিজার্ভ বাড়ছে
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবেরিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর। বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে; এই সূচক বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার রিজার্ভের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবেরিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তবে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আবার কমে আসবে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রিজার্ভসহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
তাতে দেখা যায়, এক মাস আগে ২৪ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।
চলতি মাসের প্রথম দিন ১ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে নামে ২৫ দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলার।
৭ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার।
১৫ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল একই, ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার।
সবশেষ বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। ‘গ্রস’ হিসাবে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে।
আমদানি কমায় এবং রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের আগস্টে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এর পর থেকে কমতে কমতে এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।
সবশেষ ডিসেম্বর মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ ২০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
গত বছরের ৭ নভেম্বর আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল; কমতে কমতে ১৩ ডিসেম্বর রিজার্ভ ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
এর পর আইএমএফের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার, ম্যালিাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৯ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
গত ৮ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ‘গ্রস’ হিসাবে নেমেছিল ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে।
গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই দিন ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র ‘গ্রস’হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। এক বছর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। মহাসংকটে পড়ায় শ্রীলঙ্কা অবশ্য আকুর থেকে বেরিয়ে এসেছে।
প্রতি দুই মাসের আমদানি বিল পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করে এসব দেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আশার কথা হচ্ছে, রিজার্ভের দুই প্রধান উৎস রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় দুটোই বাড়ছে। এখন রিজার্ভ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে।”
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সব দেশেই পড়েছে। সব দেশেই ডলারের দর বেড়েছে; মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল। রিজার্ভ কমেছে।”
“তবে ভালো খবর যে, এই সময় রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স দুটোই বাড়ছে। তানাহলে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসত। এই দুই সূচক বাড়ায় আগামী দুই সপ্তাহে রিজার্ভ আরও খানিক বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে উঠতে পারে।”
“তার পর অবশ্য আকুর জানয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে। সেই বিল যদি ১ বিলিয়ন ডলারও হয়, তাও কিন্তু রিজার্ভ ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে।”
‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ যাতে কোনো অবস্থাতেই আর ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে না নামে, সেজন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরমর্শ দেন আহসান মনসুর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ১২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৬ দিনে ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭ কোটি ১৯ লাখ ডলার।
মাসের বাকি ১৩ দিনে (১৭ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি) এই হারে এলে মাস শেষে জানুয়ারির মতো এই মাসেও রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ২০৮ কোটি ৪৩ লাখ (২.০৮ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে হিসাব বলছে।
ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে। এই মাসেও যদি ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে আসে তাহলে রিজার্ভের উপর চাপ কমবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।
নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১০ কোটি (২.১০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। যা ছিল সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
আগের মাস গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল প্রায় ২ বিলিয়ন (১৯৯ কোটি ১২ লাখ) ডলার।
অন্যদিকে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এই মাসে পণ্য রপ্তানি করে ৫৭২ কোটি ৪৩ লাখ (৫.৭২ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।
একক মাসের হিসাবে এই আয় অতীতের যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ (৬.৩৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।
কমেন্ট