রিজার্ভ ২১.৩০ বিলিয়ন ডলার

রিজার্ভ ২১.৩০ বিলিয়ন ডলার

এক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও বেড়েছে। মঙ্গলবার দিন শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।

চার দিন আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। এক মাস আগে ৭ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

তবে দু-এক দিনের মধ্যেই এই রিজার্ভ বেশ খানিকটা কমে আসবে। বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। সেটা সমন্বয়ের পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের সামান্য কিছু উপরে অবস্থান করবে।

আকুর বিল পরিশোধের পরও যাতে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তৃতীয় কিস্তির ঋণ পেতে তাদের শর্ত অনুযায়ী চলতি মার্চ মাস শেষে নিট রিজার্ভ যেনো ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার থাকে—সেজন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেজন্যই রজিার্ভ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন হয় ১২ ডিসেম্বর। তবে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় বাংলাদেশ এ শর্তে কিছুটা ছাড় চাইলে সংস্থাটি তা পুনর্নির্ধারণ করে।

সে অনুযায়ী গত ডিসেম্বর শেষে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন, এ বছরের মার্চ শেষে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ও জুন শেষে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি গেলেও তা পূরণ সম্ভব হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। নিট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলারের মতো।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, রিজার্ভ রাখার জন্য সোয়াপ কারেন্সি সুবিধাসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সে কারণেই গত কয়েক দিনে রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। তারপরও মনে হয় না মার্চ শেষে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।”

তিনি বলেন, “বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের চেয়ে নিট রিজার্ভের পরিমাণ ৩ থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার কম থাকে। আকুর বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের কিছু উপরে অবস্থান করবে। সেখান থেকে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে হিসাব করলে আইএমএফের শর্ত পূরণ হবে না।”

“তখন আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে সংস্থাটি।”

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং টাকা-ডলার অদলবদল (সোয়াপ) সুবিধার আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলার জমা দেওয়ায় রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “এ কথা ঠিক যে, আকুর দোনা শোধের পর রিজার্ভ কিছুটা কমবে। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে রিজার্ভ অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই আগের অবস্থানে চলে যাবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৪ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার। ১ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

আমদানি কমায় এবং রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের আগস্টে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এর পর থেকে কমতে কমতে এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।

সবশেষ ডিসেম্বর মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ ২১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

গত বছরের ৭ নভেম্বর আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল; কমতে কমতে ১৩ ডিসেম্বর রিজার্ভ ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

এর পর আইএমএফের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার, ম্যালিাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৯ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

গত ৮ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই দিন ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র ‘গ্রস’হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। এক বছর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। মহাসংকটে পড়ায় শ্রীলঙ্কা অবশ্য আকুর থেকে বেরিয়ে এসেছে।

প্রতি দুই মাসের আমদানি বিল পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করে এসব দেশ।

রিজার্ভ আরও বেড়েছে পরবর্তী

রিজার্ভ আরও বেড়েছে

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর