রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামল
গত ডিসেম্বর মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের কম সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৫ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আকুর ১ আমদানি বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সোমবার সমন্বয়ের পর রিজার্ভ খানেকটা কমেছে। রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ছে; সোয়পা কারেন্সির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা বাড়তি ডলার রিজার্ভে জমা করা হচ্ছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এই সূচক বেড়ে আগের অবস্থানে চলে যাবে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ৬ মার্চ বুধবার বিপিএম৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার সেই রিজার্ভ থেকে ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করা হয়।
৮ ও ৯ মার্চ শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। ১০ মার্চ রোববার ছিল আন্তর্জাতিক ছুটি। সোমবার (১১ মার্চ) সমন্বয়ের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ‘গ্রস’ হিসাবে নেমেছে ২৫ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারে
বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।
সবশেষ গত ডিসেম্বর মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের কম সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
আকুর বিল পরিশোধের পরও যাতে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তৃতীয় কিস্তির ঋণ পেতে তাদের শর্ত অনুযায়ী চলতি মার্চ মাস শেষে নিট রিজার্ভ যেনো ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার থাকে—সেজন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সেজন্যই রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন হয় ১২ ডিসেম্বর। তবে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় বাংলাদেশ এ শর্তে কিছুটা ছাড় চাইলে সংস্থাটি তা পুনর্নির্ধারণ করে।
সে অনুযায়ী গত ডিসেম্বর শেষে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন, এ বছরের মার্চ শেষে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ও জুন শেষে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় আেইএমএফ। ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি গেলেও তা পূরণ সম্ভব হয়নি।
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, রিজার্ভ রাখার জন্য সোয়াপ কারেন্সি সুবিধাসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সে কারণেই গত কয়েক দিনে রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছিল। আকুর দেনা শোধের পর তা ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এখন মার্চ শেষে আইএমএফ ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ সংরক্ষণের যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে তা মনে হয় না সম্ভব হবে।”
“আর যদি সেটা না হয়, তখন আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে সংস্থাটি।”
হিসাব দিয়ে আহসান মনসুর বলেন, বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের চেয়ে নিট রিজার্ভের পরিমাণ ৩ থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার কম থাকে। আকুর বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। সেখান থেকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে হিসাব করলে আইএমএফের শর্ত পূরণ হবে না।”
“এখন মাসের বাকি দিনগুলোতে রিজার্ভ কতোটা বাড়ে সেটাই এখন দেখার বিষয়।”
গত বছরের ৭ নভেম্বর আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল; কমতে কমতে ১৩ ডিসেম্বর রিজার্ভ ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
এর পর আইএমএফের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৯ কোটি ডলার, ম্যালিাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৯ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
গত ৮ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই দিন ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র ‘গ্রস’হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। এক বছর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
আকু হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।
অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ডলার-টাকা অদলবদল বা সোয়াপ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের পতনের ধারা শ্লথ হয়েছে। নতুন এ ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার ও টাকার অদলবদল করতে পারছে।
সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য টাকা-ডলার অদলবদলের এ ব্যবস্থা চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কমেন্ট