৮ মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ, ২৬% দিয়েছে এডিবি

৮ মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ, ২৬% দিয়েছে এডিবি

মোট ঋণ-সহায়তার ৪০ দশমিক ৬২ শতাংশ চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে। এর মধ্যে আসল ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। সুদ ৮০ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৪৯৯ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার (৫ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩০ কোটি ১৬ লাখ (১.৩০ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। মোট ঋণ-সহায়তার ২৬ দশমিক শূন্য চার শতাংশই দিয়েছে সংস্থাটি।

আরেক উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিয়েছে ১০৪ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার (১.০৪ বিলিয়ন) ডলার। বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ৮৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) রবিবার বিদেশি ঋণের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকুলে ৫০০ কোটি ডলারের যে ঋণ-সহায়তা ছাড় করেছে, তার মধ্যে ২০৩ কোটি (২.০৩ বিলিয়ন) ডলার চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে।

হিসাব বলছে, মোট ঋণ-সহায়তার ৪০ দশমিক ৬২ শতাংশ চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে। এর মধ্যে আসল ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। সুদ ৮০ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই আট মাসে মোট ৪৮৭ কোটি ৬৫ লাখ (৪.৮৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরমধ্যে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৪০ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আসল বাবদ শোধ করা হয়েছিল ১০২ কোটি ১১ লাখ (১.০২ বিলিয়ন) ডলার।

গত বছরের শুরু থেকে সরকারের বিদেশি ঋণ গ্রহণ বাড়তে শুরু করেছিল। তবে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসে তা কিছুটা কমে যায়। তবে ডিসেম্বরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করে দাতারা। এতে আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিসাবে প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে বিদেশি ঋণ-সহায়তা।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কিছু বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় সার্বিকভাবে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। যেমন মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। তবে ঋণ পরিশোধের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।

প্রতিশ্রুতি বেড়েছে গুণ

ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৭২০ কোটি ১২ লাখ (৭.২০বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এই প্রতিশ্রুতির অঙ্ক ছিল মাত্র ১৭৮ কোটি ৩৩ লাখ (১.৭৮ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই আট মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দাতাদের ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৪ গুণের বেশি।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের যে বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছে, তারমধ্যে ৪৬৩ কোটি ৩২ লাখ (৪.৬৩ বিলিয়ন) ডলার প্রকল্প ঋণ। আর ২৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার অনুদান। অনুদানের মধ্যে ২১ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার প্রকল্প সহায়তা। আর ১ কোটি ৫ লাখ ডলার খাদ্য সহায়তা।

আরও কম সুদের ঋণ প্রয়োজন

দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। এই চাপ সামাল দিতে আরও বেশি বিদেশি ঋণ-সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “স্বস্তির খবর এই যে, গত ডিসেম্বরে আইএমএফ, এডিবি ও কোরিয়ার ঋণ পাওয়ায় বিদেশি ঋণ সহায়তা বেড়েছে। অর্থবছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) হিসাবে ফরেন এইড ছিল ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। ছয় মাস শেষে তা ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। সাত মাস শেষে আরও খানিকটা বেড়েছে।”

“এতে রিজার্ভের পতন ঠেকানো গিয়েছিল। তা নাহলে রিজার্ভ আরও কমে যেত। মার্চের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কিন্তু আবার ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে।

“তাই রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ অন্য দাতাদের কাছ থেকে আরও ঋণ-সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। যেসব ঋণ পাইপলাইনে আটকে আছে, সেগুলো দ্রুত ছাড় করাতে দাতাদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে হবে,” বলেন দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।

দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের এই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল।

কিন্তু সেই জোয়ার আর থাকেনি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ ৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সেই নেতিবাচক ধারা নিয়েই ২০২৩-২৪ অর্থবছর শুরু হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।

বিদেশি ঋণে রেকর্ড, ছাড়াল ১০০ বিলিয়ন ডলার পরবর্তী

বিদেশি ঋণে রেকর্ড, ছাড়াল ১০০ বিলিয়ন ডলার

কমেন্ট