কয়েক মাসের মধ্যে রিজার্ভ স্থিতিশীল হবে: মুডি’স
বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ২৪ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মুডি’স পূর্বাভাস দিয়েছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণের পর বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) উদ্ধৃত্ত থাকার কারণে কয়েক মাসের মধ্যে রিজার্ভ স্থিতিশীল হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার নাম এখন বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। তবে এই সূচকটি নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি’স।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে।
বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ২৪ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মুডি’স পূর্বাভাস দিয়েছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণের পর বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) উদ্ধৃত্ত থাকার কারণে কয়েক মাসের মধ্যে রিজার্ভ স্থিতিশীল হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে ডলারের মজুত ক্রমাগত কমলেও মুডিস এই পূর্বাভাস দিয়েছে।
মুডি’স বলেছে, গত জানুয়ারি মাসে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা ধীরে ধীরে কমছে। সেই সঙ্গে আমদানিতে এখনো বিধিনিষেধ থাকায় চলতি হিসাবের স্থিতি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দেওয়া চলমান রাখায় রিজার্ভে ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে।
মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান নিয়ে পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার পর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি স্থিতিশীল রাখাসহ ঋণমান ‘বি ওয়ান’ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ কর্মসূচি চলমান রাখতে এই ইতিবাচক ধারা জরুরি বলে মনে করে মুডি’স।
“স্থিতিশীলতা আছে বলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ঋণসহায়তা পাচ্ছে।”
২০২২ সালের জুনের আগে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর পর থেকে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কমতে থাকে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়ে যায়। ফলে রিজার্ভ কমে যায়। এ সময় টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে।
মুডিসের আশা, মহামারির আগের সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের আর্থিক পরিস্থিতি দুর্বল হলেও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণসহায়তা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম বাংলাদেশের একটি পোশাকশিল্প রয়েছে। দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার পেছনে এ খাতের অবদান আছে।
মুডি’স আরও বলছে, জোরালো প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতি ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। রাজস্বের তুলনায় বাড়তি ঋণ ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতায় বাংলাদেশের আর্থিক স্বস্তি কমেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতিযোগিতামূলক পোশাকশিল্প দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জিডিপি ও রপ্তানি আয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে। তবে পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়া ও আর্থিক হিসাবের ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। এ কারণে ঋণমানের ওপর চাপ বেড়েছে।
এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ে দুর্বলতা, সক্ষমতার তুলনায় বেশি সুদ ব্যয় ও ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণের কারণে বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা কমে যাচ্ছে। এ বাস্তবতায় তারা বলেছে, এ পরিস্থিতি দুই থেকে তিন বছর আগের তুলনায় নাজুক থাকবে।
মুডি’স বলেছে, মূল্যস্ফীতির চাপ থাকায় দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিও তুলনামূলকভাবে কমবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, গত কয়েক দিনে রিজার্ভ খানিকটা বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৮ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছিল ২৩ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে।
কোরবানির ঈদ এবং টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স পালে হাওয়া লাগায় রিজার্ভ ঊর্ধ্বমূখী হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সপ্তাহে একদিন রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করে। সেই তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার।
১৪ মে আকুর দেনা শোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ‘গ্রস’ হিসাবে নেমেছিল ২৩ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, নয় দিনে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৩৬ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ৩৭ কোটি ডলার।
কমেন্ট