জুনেই রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারে উঠছে

জুনেই রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারে উঠছে

৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যেই বিশ্ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও এআইআইবি ও কোরিয়া সরকারের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসাবে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভে যোগ হবে। তখন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উল্লম্ফনের কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

সুখবর হচ্ছে, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যেই বিশ্ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও এআইআইবি ও কোরিয়া সরকারের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসাবে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভে যোগ হবে। তখন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে।

তখন সংকটের এই সময়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ নিয়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে—তা আর থাকবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

শুত্রবার বাংলাদেশকে প্রায় ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

এরমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি, ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। যা চলতি জুন মাসের মধ্যেই বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে যোগ হবে। তখন টানটান অবস্থার মধ্যে থাকা রির্জাভে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভায় দুই প্রকল্পে ৯০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট-২ (ডিপিসি)–এর আওতায় বাজেট সহায়তা হিসেবে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এর আগে ডিপিসি-২–এর আওতায় প্রথম কিস্তিতে ২৫ কোটি ডলার দিয়েছিল সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, এই বাজেট সহায়তা বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সংস্কারের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের গতি বাড়াবে।

এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় বাংলাদেশের জন্য আরেকটি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন হয়। জলবায়ু সহিষ্ণু ও টেকসই প্রবৃদ্ধি, শহরাঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন নামের এই প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মেহেরিন এম মাহবুব এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আগামী রবিবার অথবা সোমবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ৯০ কোটি ডলারের দুই প্রকল্পের ঋণ চুক্তি সই হবে। চুক্তির পর কয়েক দিনের মধ্যে বাজেট সহায়তার ৫০ কোটি ডলার বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হবে।”

সে হিসাবে চলতি জুন মাসের মধ্যেই এই ৫০ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হবে বলে জানান তিনি।

বিশ্বব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করবে। নতুন অর্থায়ন বাংলাদেশকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহায়তা করবে—একটি হচ্ছে আর্থিক খাত ও নগর ব্যবস্থাপনা এবং অন্যটি উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট বার্নার্ড হ্যাভেন বার্তায় বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে এবং আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়াদের জন্য অর্থপ্রাপ্তি ব্যবস্থা উন্নত করতে একটি ভালো কার্যকর আর্থিক খাত বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক এখন রিজার্ভ। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় রিজার্ভ খানিকটা বেড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ১৪ জুন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।

দুই সপ্তাহ আগে গত ৫ জুন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৩২ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ২৬ কোটি ডলার।

দুই সপ্তাহে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৮৬ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ৫৫ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।

সবশেষ গত মার্চ মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ বর্তমানের ১৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

বিশ্বব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার যোগ হলে রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া চলতি জুন মাসের মধ্যে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা রয়েছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাজেট সহায়তার ২৫ কোটি ডলারও এ মাসেই রিজার্ভে যোগ হবে। গত ১০ জুন এডিবি’র সঙ্গে এই ঋণের চুক্তি সই করেছে ইআরডি।

এছাড়া এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) ৪০ কোটি ডলার এবং কোরিয়া সরকার ১০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিচ্ছে। নিচ্ছে। জুন মাসের মধ্যে এই ৫০ কোটি ডলারও রিজার্ভে যোগ হবে বলে জানিয়েছেন ইআরডি’র কর্মকর্তারা।

সব মিলিয়ে জুনের মধ্যেই বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে।

তখন প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসাবে ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “দেশের সামস্টিক অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে এই বাজেট সহায়তা গ্রহণ একটি ভাল সিদ্ধান্ত। এই অর্থ সরাসরি রিজার্ভে যুক্ত হবে। এতে রিজার্ভ বেশ খানিকটা বাড়বে। স্বস্তি পাবে সরকার।”

তিনি বলেন, “হতাশ হওয়ার কিছু নেই। গত ৯ মে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা-ডলার বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করেছে। এর পর থেকে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। রিজার্ভও বাড়বে।”

“রিজার্ভ কমায় সার্বিক বিষয় বিবেচনা নিয়ে আইএমএফ বাংলাদেশের নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আইএমএফের দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১৪ দশমিক ৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। এটা একটা স্বস্তির খবর।”

“আমার মনে হয়, রিজার্ভ আর কমবে না; বাড়তেই থাকবে,” বলেন দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান মনসুর।

অর্থনীতির এই সংকময় মূহুর্তের কথা উল্লেখ করে দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান মনসুর বলেন, “এই রকম একটা পরিস্থিতিতে বাজেট সাপোর্ট পাওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য ভাল। এই ঋণে একদিকে রিজার্ভ বাড়বে; অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে দেশীয় মুদ্রা বাজেট বাস্তবায়নে ব্যয় করতে পারবে সরকার।”

নিট রিজার্ভ

বিপিএম-৬ ও ‘গ্রস’ হিসাবের বাইরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না।

বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভ থেকে আকুর দায়, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ এবং আইএমএফের স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) হিসেবে থাকা ডলার বাদ যায়। আর এ সব বাবদ বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভ থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ যায়।

এ হিসাবে বাংলাদেশের প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ এখন সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ৯০ কোটি ডলার, অর্ধেকের বেশি বাজেট সহায়তা পরবর্তী

বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ৯০ কোটি ডলার, অর্ধেকের বেশি বাজেট সহায়তা

কমেন্ট