আকুর বিল শোধের পর রিজার্ভ নামল ২০ বিলিয়নে
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মাসের ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বুধবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আবার কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংকের ৫০ কোটি ডলারসহ আরও কয়েকটি সংস্থার ঋণের উপর ভর করে রিজার্ভে যে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছিল, সপ্তাহ না যেতেই তা ফের উবে গেছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
মঙ্গলবার আকুর দেনা পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার তা সম্বন্বয়ের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “আকুর দেনা শোধের পর প্রতিবারই রিজার্ভ খানিকটা কমে যায়। এবারও তাই হয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহে একদিন অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের পাশপাশি রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করে। সে তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মাসের ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বুধবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ কত হয়েছে তা জানা যায়নি।
গত ২৮ জুন আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হয়। এ ছাড়া বাজেট সহায়তার ঋণ হিসেবে আসা কোরিয়া সরকার, বিশ্বব্যাংক ও আইডিবি থেকে মোট ৯০ কোটি ডলার যোগ হয় রিজার্ভে। একইসঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের একটি অংশও যোগ হয়েছে।
সব মিলিয়ে ওই দিন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছে। ‘গ্রস’ হিসাবে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
গত কয়েক দিন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২১ দশমিক ৭৫ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে উঠানামা করেছে।
আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য সংস্থার ঋণ পাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম-৬ পদ্ধতির গ্রস হিসাবে তা ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।
সবশেষ গত এপ্রিল মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।
সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ বর্তমানের ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
সেই ক্ষেত্রে রিজার্ভ এখন টানটান অবস্থায় আছে।
আকু হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।
অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।
কমেন্ট