রিজার্ভ ২০.৪৯ বিলিয়ন ডলার

রিজার্ভ ২০.৪৯ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘উইলকি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ নামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভসহ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।

এক মাস পর অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ এর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে গত আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে সবশেষ গত ৩০ জুন রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওইদিন হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।

সবশেষ গত মে মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ বর্তমানের ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘উইলকি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ নামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভসহ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।

কিন্তু গত ৪ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত প্রকাশিত (চার সপ্তাহ) যে ‘সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রকাশ করা হচ্ছে—তাতে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক হেরফের হলেও রিজার্ভের তথ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। এমনকি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভের কোনো হেরফের ছিল না।

এর আগে যখন রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, তখন প্রতিদিনই রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভবনের উপরে স্ক্রলের মাধ্যমে রিজার্ভের তথ্য দেওয়া হত। মতিঝিলের রাস্তা এবং আশাপাশের বিভিন্ন ভবন থেকে সেই তথ্য দেখা যেত।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) এবং নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব করতে হবে।

সেই শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে গত বছরের জুলাই থেকে ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ হিসাবেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হয় না; আইএমএফকে জানানো হয়।

এর আগে ২৭ জুন ‘সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

২৮ জুন আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হয়। এ ছাড়া বাজেট সহায়তার ঋণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার যোগ হয় রিজার্ভে।

সব মিলিয়ে ওই দিন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছে। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়ে হয় ২৭ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।

এর পর ৪ জুলাই, ১১ ও ১৮ জুলাই ‘সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই তিন সপ্তাহে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে পরিবর্তন দেখা গেলেও রিজার্ভের তথ্য ছিল ৩০ জুনেরই। অর্থাৎ বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।

এর মধ্যে গত ৯ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আকু হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।

অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।

নিট রিজার্ভ

বিপিএম-৬ ও ‘গ্রস’ হিসাবের বাইরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়; প্রকাশ করা হয় না।

বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভ থেকে আকুর দায়, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ এবং আইএমএফের স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) হিসেবে থাকা ডলার বাদ পড়বে। আর এ সব বাবদ বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভ থেকে সাড়ে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে রিজার্ভের প্রকৃত বা নিট হিসাব করতে হয়।

রিজার্ভ নিয়ে লুকোচুরি কেন পরবর্তী

রিজার্ভ নিয়ে লুকোচুরি কেন

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর