আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ নামল ১৯.৪৬ বিলিয়নে
সোমবার আকুর জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর সমন্বয়ের পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর আবার ২০ বিলিয়ন ডলারে নিচে নেমে এসেছে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।
সোমবার আকুর জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর রিজার্ভ কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সোমবার ব্যাংক আওয়ার শেষে রিজার্ভ থেকে আকুর বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সমন্বয় হওয়ার পর রিজার্ভ কমে গেছে।”
গত বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বুধবার বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
সোমবার আকুর জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
তবে ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ কতো হয়েছে—তা জানা যায়নি।
এক সপ্তাহ আগে ২৮ আগস্ট বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার।
এক বছর আগে গত বছরের ৪ সেপ্টম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৯ দমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং বাজেট সহায়তার ঋণ হিসেবে আসা কোরিয়া সরকার, বিশ্বব্যাংক ও আইডিবি থেকে মোট ৯০ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হওয়ায় গত জুনের শেষে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। ‘গ্রস’ হিসাবে ওঠে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে।
৯ জুলাই আকু মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ‘গ্রস’ হিসাবে নামে ২৫ দশমিক বিলিয়ন ডলারের নিচে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভের পাশপাশি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।
গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই দিন ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধু ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।
সবশেষ গত জুন মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।
সে হিসাবে আকুর দেনা পরিশোধের পর ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ যে রিজার্ভ থাকবে তা দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
সেই ক্ষেত্রে রিজার্ভ এখন টানটান অবস্থায় থাকবে।
আকু হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।
অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।
কমেন্ট