রিজার্ভ বাড়ছে, এক সপ্তাহে বেড়েছে ২০ কোটি ডলার

রিজার্ভ বাড়ছে, এক সপ্তাহে বেড়েছে ২০ কোটি ডলার

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই সূচক বেড়েছে ২০ কোটি ডলার।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বুধবার বাংলাদেশের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ১৯ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ২০ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ১৬ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভের পাশপাশি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।

সেই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২ সেপ্টম্বর যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তাতে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

গত ৯ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে যায়। আকুর দেনা শোধের আগে ৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

গত ২৯ আগস্ট বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

এক বছর আগে গত বছরের ২৫ সেপ্টম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৭ দমিক ১২ বিলিয়ন ডলার।

আমদানি ব্যয় কমায় ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই দিন ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

১২ জুলাইয়ের আগে শুধু ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।

রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।

সবশেষ গত জুলাই মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

সে হিসাবে ১৯ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

আকু হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।

অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা গত ১৭ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, রিজার্ভের পতন থামানো গেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় রিজার্ভ বেড়েছে; আর তাতেই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের পতন থেমেছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত রবিবার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরের প্রথম ২১ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৩ কোটি ৪২ লাখ (১.৬৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের পুরো মাসের চেয়েও ৩০ কোটি ডলার বা ২২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৪১৩ কোটি (৪.১৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি।

রিজার্ভের পতন থামেনি, কমেছেই পরবর্তী

রিজার্ভের পতন থামেনি, কমেছেই

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর