রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোর মেয়াদের আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে; তখন রিজার্ভ কমে ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। আর এই সূচকের উপর ভর করে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়ছে; ২০ বিলিয়ন ডলার ছুঁইছুঁই করছে। এক মাসে বেড়েছে ৬৬ কোটি ডলার।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বুধবার (১৬ অক্টোবর) বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।
এক মাস আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মাসের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৫৬ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ৬৬ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, রেমিটেন্সের যেভাবে বাড়ছে, তাতে দু-একদিনের মধ্যেই বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। চলতি অক্টোবর মাস শেষে তা ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভের পাশপাশি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে যায়। আকুর দেনা শোধের আগে ৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
এক বছর আগে গত বছরের ১৬ অক্টোবর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি ব্যয় কমায় ২০২১ সালের আগস্টে বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই দিন ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধু ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।
সবশেষ গত আগস্ট মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।
সে হিসাবে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোর মেয়াদের আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে; তখন রিজার্ভ কমে ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
আকু হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।
অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।
১২ দিনেই এসেছে বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স
রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের পর চলতি অক্টোবর মাসেও বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরের প্রথম ১২দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৯৮ কোটি ৬৬ লাখ ৩০ হাজার (প্রায় ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।
মাসের বাকি ১৯ দিনে (১৩ থেকে ৩১ অক্টোবর) এই হারে এলে মাস শেষে এই অঙ্ক ২৫৫ কোটি (২.৫৫ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে। একক মাসের হিসাবে যা হবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল।
দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন)।
সব মিলিয়ে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৬.৫৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।
কমেন্ট