অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বিদেশি ঋণ ৮৫ কোটি ডলার, পরিশোধ ১.১৩ বিলিয়ন

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বিদেশি ঋণ ৮৫ কোটি ডলার, পরিশোধ ১.১৩ বিলিয়ন

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যতো ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে তার চেয়ে ২৮ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মোটা অঙ্কের ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। কিন্তু সেই ঋণের এক ডলারও এখনো দেশে আসেনি।

এরই মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তিন মাস (প্রথম প্রান্তিক, জুলাই-সেপ্টেম্বর) পার হয়ে গছে। এই তিন মাসে বিদেশি ঋণ প্রাপ্তির অবস্থা খুবই খারাপ; যে ঋণ পাওয়া গেছে, তার চেয়ে আগে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ অনেক বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) রবিবার চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের মোট ঋণ, প্রতিশ্রুতি ও সুদ-আসল পরিশোধসহ বিদেশি ঋণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।

তাতে দেখা যায়, এই তিন মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মাত্র ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে আগে পাওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ (১.১৩ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যতো ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে তার চেয়ে ২৮ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করা হয়েছে।

অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টেও ছিল একই চিত্র। ওই দুই মাসে বাংলাদেশ দাতাদের কাছে পুঞ্জিভূত পাওনার কিস্তি বাবদ পরিশোধ করেছিল ৫৮ কোটি ৯২ লাখ ডলার; পেয়েছিল ৪৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে দাতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ ঋণ-হায়তা পাওয়া গিয়েছিল তার চেয়ে ১৩ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ পরিশোধ করতে হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “গত কয়েক বছর আগে থেকে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প শেষ করেছে বাংলাদেশ। এসব প্রকল্পের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে। তাই এবছর আগের বছরের তুলনায় বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে।”

তবে পরের মাস থেকে চিত্র পরিবর্তন হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “হয়ত পরের মাসে দাতাদের কাছ থেকে অর্থ ছাড় বাড়বে। তখন দাতাদের পাওনা কিস্তি পরিশোধের পর এই রকম নেতিবাচক প্রবণতা থাকবে না।”

ইআরডি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বিদেশি ঋণ ছাড় গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ কমেছে। এই তিন মাসে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার ঋণ ছাড় করেছে দাতারা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় করেছিল ১২৮ কোটি ১৭ লাখ (১.২৮ বিলিয়ন) ডলার।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের শুরু থেকে দেশ উত্তাল হয়ে পড়ে। আর ওই মাসে বিদেশি ঋণ ছাড় হয় ৩৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।

পরের মাসে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের। দুই দিন বাদে ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা করে।

এই মাসে বিদেশি অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র ১০ কোটি ডলার। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে দাতারা ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার ছাড় করেছে।

ইআরডি’র হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দাতাদের অর্থ ছাড় কমেছে ৩৪ শতাংশ।

আর আগে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ বেড়েছে ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সুদ-আসল বাবদ ৮৭ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ (১.১২ বিলিয়ন) ডলার।

সাধারণত অর্থ ছাড়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমই থাকে, আগের অর্থবছরগুলোতে চিত্র ছিল এমনটাই। তবে দেশের অস্থির সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ বিদেশি অর্থ এসেছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ গেছে ঋণ শোধ করতে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সবচেয়ে বেশি ২১ কোটি ডলার দিয়েছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। রাশিয়া দিয়েছে ১৪ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার মধ্যে ৭ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ভারত ছাড় করেছে ৪ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার ডলার। এই তিন মাসে চীন কোনো অর্থ ছাড় করেনি। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ৬৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদ-আসল বাবদ যে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, তার মধ্যে ৪৪ কোটি ১০ লাখ ডলার সুদ। আর আসল ৬৮ কোটি ৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের একই সময়ে সুদ-আসল বাবদ যে ৮৭ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল, তার মধ্যে ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার ছিল সুদ। আর আসল ছিল ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৯৮৯ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার (৯.৮৯ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে আগে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার (৩.৩৫ বিলিয়ন) ডলার।

হিসাব করে দেখা যায়, গত অর্থবছরে মোট ঋণ-সহায়তার ৩৪ শতাংশ চলে যায় আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে। এর মধ্যে আসল ছিল ২ বিলিয়ন ডলার। আর সুদ ছিল ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯২৬ কোটি ৬৮ লাখ (৯.২৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৯৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। আসল বাবদ শোধ করা হয়েছিল ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিশ্রুতি তলানিতে

ইআরডি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর নতুন করে ঋণ প্রতিশ্রুতি একেবারেই তলানিতে নেমে এসেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে মাত্র ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৮৮ কোটি ডলার।

অবশ্য এ নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই বলে দাবি করেছেন ইআরডির কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী একাধিক খাতে বড় অঙ্কের ঋণ ও বাজেট সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

সেগুলো পাওয়া শুরু হলে বিদেশি ঋণের প্রবাহ বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।

রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার পরবর্তী

রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর