রিজার্ভ কমেছে, আরও কমবে

রিজার্ভ কমেছে, আরও কমবে

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে; তখন রিজার্ভ আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় গত দেড় মাস অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ঊর্ধ্বমূখী ধারায় ছিল। কিন্তু সেই রিজার্ভ ফের নিম্মমূখী হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বুধবার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে; তখন রিজার্ভ আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এক সপ্তাহ আগে ১৬ অক্টোবর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১৩ কোটি ডলার।

গত ৯ সেপ্টেম্বর আকুর জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। আকুর দেনা শোধের আগে ৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।

রেমিটেন্স বাড়ায় এবং আমদানি ব্যয় কমায় গত দেড় মাসে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এই সপ্তাহে সেই রিজার্ভ কমে ফের নিম্মমূখী হয়েছে।

অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং স্থিতিশীল হচ্ছে।

গত ২০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগ দেওয়ার আগে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর বলেন, “আগের সরকারের আমলে রিজার্ভ প্রতি মাসে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন (১৩০ কোটি) ডলার করে কমে আসছিল, তবে এখন তা একটি ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভের পাশপাশি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।

‘সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক মাস আগে ২৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

এক বছর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

আমদানি ব্যয় কমায় ২০২১ সালের আগস্টে বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই দিন ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

১২ জুলাইয়ের আগে শুধু ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।

রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।

সবশেষ গত আগস্ট মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

সে হিসাবে ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

আকু হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।

অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোর মেয়াদের আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে। এবার কি পরিমাণ বিল শোধ করতে হবে—তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চলতি অক্টোবর মাস শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে। সেই বিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রাথমিক হিসাব দিয়েছেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আকুর বিল জুলাই-আগস্ট মাসের মতোই ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো হবে।

সে হিসাবে এবার আকুর দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ১৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে বলে হিসাব কষছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা।

রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২০ অক্টোবর রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরের প্রথম ১৯ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৫৩ কোটি ২৬ লাখ (১.৫৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

মাসের বাকি ১২ দিনে (২০ থেকে ৩১ অক্টোবর) এই হারে এলে মাস শেষে এই অঙ্ক ২৫০ কোটি (২.৫০ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে। একক মাসের হিসাবে যা হবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।

তার আগের তিন মাসে অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৬.৫৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বিদেশি ঋণ ৮৫ কোটি ডলার, পরিশোধ ১.১৩ বিলিয়ন পরবর্তী

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বিদেশি ঋণ ৮৫ কোটি ডলার, পরিশোধ ১.১৩ বিলিয়ন

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর