ডিসেম্বরেই মিলবে বিশ্বব্যাংক-এডিবির ১.১ বিলিয়ন ডলার, রিজার্ভ আরও বাড়বে
বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রকল্প সহায়তার পাশাপাশি বাজেট সহায়তাও দিয়ে থাকে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ হিসেবে সহায়তা দেয় তারা। এ ছাড়া সরকারকে অনেকটা নগদ অর্থ হিসেবে বাজেট সহায়তা দেয়।
চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ১১০ কোটি (১.১০ বিলিয়ন) ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এতে বেশ কিছুদিন ধরে চাপের মধ্যে থাকা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগ থেকে পাঠানো এক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে বেগবান করতে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার এবং ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে।
“মোট ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই বাজেট সহায়তা চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
বাজেট সহায়তার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে ৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৮ কোটি ডলার প্রকল্প সহায়তাও অনুমোদন করেছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর মধ্যে ‘স্ট্রেনদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স প্রোগ্রাম, সাবপ্রোগ্রাম-১’ শীর্ষক কর্মসূচী বাস্তবায়নে জন্য ৬০ কোটি ডলারের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অর্থ বিভাগের উদ্যোগে এ কর্মসূচিটি প্রণয়ন করা হয়।
১১ ডিসেম্বর ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় সংস্থাটির সদর দপ্তরে বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাংক গত ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অনুকুলে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে। সবুজ ও জলবায়ু-সহনশীল উন্নয়নে সংস্কার কার্যক্রমসমূহ সফলভাবে অর্জন করায় ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিট’ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংক এ বাজেট দেবে।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও এডিবির সঙ্গে এই এই ঋণের চুক্তি সই হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রকল্প সহায়তার পাশাপাশি বাজেট সহায়তাও দিয়ে থাকে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ হিসেবে সহায়তা দেয় তারা। এ ছাড়া সরকারকে অনেকটা নগদ অর্থ হিসেবে বাজেট সহায়তা দেয়। এই অর্থ সরকার নিজের মতো করে খরচ করতে পারে।
তবে দুই ক্ষেত্রেই নানা ধরনের সংস্কারের শর্তও থাকে। বাজেট সহায়তা ঋণে প্রকল্প ঋণের চেয়ে নমনীয় শর্ত থাকে।
গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই আর্থিক খাতের সংস্কারসহ মোটা অঙ্কের ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা।
সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই বাজেট সাপোর্ট হিসেবে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়।
বাজেট সহায়তার এই অর্থ পাওয়া গেলে বাংলাদেশের রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা।
রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে রেমিটেন্স বাড়ছে; চলতি ডিসেম্বর মাসের ২১ দিনেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। মূলত এই দুই সূচকের উপর ভর করেই রিজার্ভ বাড়ছে।”
“এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র বাজেট সহায়তা যোগ হলে রিজার্ভ আরও বাড়বে। তখন রিজার্ভ নিয়ে আমাদের আর কোনো চিন্তা থাকবে না।”
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গ্রস হিসাবে হয়েছে ২৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
গত ১১ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে।
এক বছর আগে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৭ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি ব্যয় কমায় এবং রেমিটেন্স বাড়ায় ২০২১ সালের আগস্টে বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথা মতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সেখানে গ্রস হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এর আগে কেবল গ্রস হিসাবের তথ্যই প্রকাশ করা হতো।
কমেন্ট