বিদেশি ঋণের এক তৃতীয়াংশই দিয়েছে এডিবি
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮০ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। মোট ঋণের ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ দিয়েছে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৩ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার দিয়েছে রাশিয়া।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (ছয় মাস, জুলাই-ডিসেম্বর) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ (৩.৫৩ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশশিক শূন্য সাত শতাংশ কম।
এই ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০৫ কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ডলারই দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। হিসাব বলছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মোট ঋণের তিন ভাগের এক ভাগ বা এক তৃতীয়াংশই দিয়েছে এডিবি। শতাংশ হিসাবে মোট ঋণের ৩০ শতাংশই দিয়েছে সংস্থাটি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮০ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। মোট ঋণের ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ দিয়েছে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৩ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার দিয়েছে রাশিয়া।
অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার মধ্যে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিয়েছে ৪৪ কোটি ১০ লাখ ডলার।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে চীনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ২৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। ভারত ছাড় করেছে ৭ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ৪ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) রবিবার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের মোট ঋণ, প্রতিশ্রুতি ও সুদ-আসল পরিশোধসহ বিদেশি ঋণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
তাতে দেখা যায়, এই ছয় মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোট ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ (৩.৫৩ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশশিক শূন্য সাত শতাংশ কম।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ (৪.০৬ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।
অন্যদিকে এই ছয় মাসে বিভিন্ন সময়ে পাওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৯৮ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। এর মধ্যে সুদ ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। আর আসল ১২৩ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার (১.২৩ বিলি) ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ-আসল বাবদ ১৫৬ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। যার মধ্যে সুদ ছিল ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার; আসল ৯২ কোটি ৬১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আগে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে আসল পরিশোধ বেড়েছে ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ; সুদ পরিশোধ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই দাতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ পাচ্ছিল তারচেয়ে তাদেরকে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছিল। অর্থাৎ যে ঋণ পাওয়া যাচ্ছিল তার চেয়ে বেশি সুদ-আসল পরিশোধে চলে যাচ্ছিল।
অর্থবছরের পাঁচ মাস (জুলাই-নভেম্বর) পর্যন্ত চলে এ অবস্থা। ওই পাঁচ মাসে দাতাদের কাছ থেকে ১৫৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার (১.৫২ বিলিয়ন) ডলার ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ। বিপরীতে সুদ ও আসল মিলিয়ে ১৭১ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার (১.৭১ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। তাতে অর্থ পাওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধে ১৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বেশি খরচ হয়েছিল।
তবে ডিসেম্বর শেষে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঋণের অঙ্ক পরিশোধের চেয়ে বেশি হয়েছে।
এই ছয় মাসের হিসাবে, দাতাদের কাছ থেকে মোট ৩ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সুদ-আসল বাবদ শোধ করা হয়েছে ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।
ডিসেম্বরে এডিবির কাছ থেকে বাজেট সহায়তার ৬০ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৫০ কোটি ডলার। এছাড়া আরও কয়েকটি দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কিছু ঋণ পাওয়া গেছে। এ কারণেই ছয় মাসের হিসাবে পরিশোধের চেয়ে ঋণের অঙ্ক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইআরডির কর্মকর্তারা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ব ব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ মোটা অঙ্কের ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্যে এডিবি ৬০ কোটি ডলার ও বিশ্ব ব্যাংক ৫০ কোটি ডলার ছাড় করেছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ের শুরু থেকে দেশ উত্তাল হয়ে পড়ে। আর ওই মাসে বিদেশি ঋণ ছাড় হয় ৩৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
পরের মাসে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের। দুই দিন বাদে ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা করে।
ওই মাসে বিদেশি অর্থ ছাড় হয় মাত্র ১০ কোটি ডলার। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে দাতারা ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার ছাড় করেছে। অক্টোবরে ছাড় করে ৩৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। নভেম্বর মাসে ছাড় করেছে ৩৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার।
সবশেষ ডিসেম্বর মাসে বিশ্ব ব্যাংক-এডিবির বাজেট সহায়তার ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারসহ মোট ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন (প্রায় ২ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিশ্রুতি কম ৬৭ শতাংশ
ইআরডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর নতুন করে ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে। জুলাই-ডিসেম্বর এই ছয় মাসে ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার (২.৩ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার (৬.৯৯ বিলিয়ন) ডলার।
এ হিসাবে এই ছয় মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
অর্থবছরের পাঁচ মাসে অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর সময়ে মাত্র ৫২ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা।
কমেন্ট