জুনের আগে মিলছে না আইএমএফের ঋণ

জুনের আগে মিলছে না আইএমএফের ঋণ

চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়ের প্রস্তাব ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থার নির্বাহী পর্ষদের সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও তা ওঠেনি; পিছিয়ে তা ১২ মার্চ করা হয়। এখন তা আরও পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আলোচিত ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার পাওয়া আরও পিছিয়ে গেছে।

তিন কিস্তিতে প্রায় ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার ইতোমধ্যেই ছাড় করেছে সংস্থাটি। বাকি ২৩৯ কোটি (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার পাওয়ার কথা চার কিস্তিতে। চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নতুন ঋণের বিষয়ে দর–কষাকষি করতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর দুই সপ্তাহের সফরে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে এসেছিল।

১৩ সদস্যের ওই দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। প্রতিনিধিদলটির সফর শেষে ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থছাড়ের কথা জানান ক্রিস পাপাজর্জিও।

সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেছিলেন, চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে রাজস্ব আয় বাড়ানো–সংক্রান্ত একটি কমিশন গঠনসহ কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৫ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ সভায় চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। বোর্ড অনুমোদন দিলে ঋণ ছাড় করা হবে।

একই সঙ্গে চলমান কর্মসূচির আওতায় ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৩০ কোটি (৫.৩০ বিলিয়ন) ডলার করতেও তারা সম্মত হয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়ের প্রস্তাব ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থার নির্বাহী পর্ষদের সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও তা ওঠেনি; পিছিয়ে তা ১২ মার্চ করা হয়। এখন তা আরও পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বোর্ড অনুমোদন করলে তার কয়েক দিন পর দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় হতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণ একসঙ্গে পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এই তথ্য জানান।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বলেছি যে, আমাদের কিছু কাজ আছে। আমরা অত তাড়া করছি না। আমি একটা জিনিস বলি, আপনারা তো ভাবছেন ভিক্ষা করে নিয়ে আসি, আসলে অনেক শর্ত মেনে এবং আমাদের নিজস্ব তাগিদে। কিছু শর্ত আছে বললেই আমরা পালন করবো, তা নয়। এখন আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো। চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও প্রবাসী আয় ভালো। আমরা মরিয়া হয়ে উঠছি না।”

আগামী মার্চে কি আইএমএফ পর্ষদে প্রস্তাব উঠছে এমন প্রশ্নে সালেহ উদ্দিন বলেন, “মার্চে না আমরা বলছি একটু অপেক্ষা করবো, আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তির প্রস্তাব এক সঙ্গে উঠবে।”

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেওয়া বিভিন্ন শর্তের মধ্যে কর সংগ্রহ ছাড়া সব শর্ত পূরণ হয়েছে।

শুধু চতুর্থ কিস্তির জন্য নয়, আগের তিন কিস্তিতেও কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি।

আইএমএফ প্রতিনিধি দল বরাবরই কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য চাপ দেয়। একই সঙ্গে কর-জিডিপি অনুপাত বছরে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্তজুড়ে দেওয়া হয়।

সরকার এ শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে। বাড়তি রাজস্ব আহরণের কৌশল হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই অর্থ বছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার।

তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নানা মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়। এতে করে প্রায় ১০টি পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর কিছুটা কমানো হয়।

বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি।

এরপর তিন কিস্তির অর্থও পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। ওই বছরের ডিসেম্বরে পায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত বছরের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে।

তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার পাওয়ার কথা চার কিস্তিতে।

রেমিটেন্সে ভর করে বাড়ছে রিজার্ভ পরবর্তী

রেমিটেন্সে ভর করে বাড়ছে রিজার্ভ

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর