রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৫০ কোটি ডলার; গ্রস হিসাবে বেড়েছে ৪৭ কোটি ডলার।
অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে; বিপিএম-৬ হিসাবে ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।
এক সপ্তাহ আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৫০ কোটি ডলার; গ্রস হিসাবে বেড়েছে ৪৭ কোটি ডলার।
রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বগতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে চাপের মধ্যে থাকা রিজার্ভ বেড়েছে। তবে দু-একদিনের মধ্যেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে।
তখন রিজার্ভ আবার কমে আসবে; বিপিএম-৬ হিসাবে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে বলে হিসাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গত ৯ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল।
আকুর দেনা শোধের আগে ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
এক সপ্তাহ পর ১৫ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
পরের সপ্তাহে (২২ জানুয়ারি) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
২৯ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। ১৩ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। সেদিন গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
২০ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার।
সবশেষ গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ আরও বেড়ে ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে; গ্রস হিসাবে উঠেছে ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে।
তবে দু-এক দিনের মধ্যেই আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ আবার ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে বলে হিসাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
রমজান মাস সামনে রেখে আমদানি বেশ বেড়েছে। সে কারণে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আকুর বিল বেশি হবে; ২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে।
এই ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে রিজার্ভ, রেমিটেন্স, রপ্তানি আয়সহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দাবি করে।
সবশেষ গত ডিসেম্বর মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
আকু হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়।
আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।
রিজার্ভের প্রধান দুটি উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ২৬ লাখ (৩২.৯৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৮৭ লাখ (১৮.৪৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
কমেন্ট