৮ মাসে বিদেশি ঋণ কমেছে ১৭%
আট মাসে দাতাদের নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি এবং অর্থছাড় কমলেও পাওনা পরিশোধ করতে হয়েছে আগের অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
দেশের উন্নয়নে বিদেশি ঋণের নতুন প্রতিশ্রুতি কমে যাচ্ছে; সেই সঙ্গে কমছে ছাড়। বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি ৬৭ শতাংশ কমে গেছে।
অন্যদিকে দাতাদের চুক্তিকৃত অর্থছাড়ও গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে। এই আট মাসে দাতাদের নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি এবং অর্থছাড় কমলেও পাওনা পরিশোধ করতে হয়েছে আগের অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় কেমন হবে- তা নির্ভর করে দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতির ওপর।
“বৈদেশিক ঋণের চুক্তি করা হয় মূলত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। তাই প্রকল্পের বাস্তবায়ন যত বেশি হবে বিদেশি ঋণের ছাড়ও তত বেশি হবে। কিন্তু চলতি অর্থ বছরের এ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন সবচেয়ে কম হওয়ায় বৈদেশিক ঋণের ছাড় কম হয়েছে।”
গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে এডিপি বরাদ্দের মাত্র ২৪ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে সরকার। গত অর্থ বছরের একই সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছিল ৩১ শতাংশের বেশি।
ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক দাতাসংস্থাগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে ২৩৫ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।
গত অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দাতাসংস্থাগুলোর সঙ্গে মোট ৭২০ কোটি ১১ লাখ ডলারের চূড়ান্ত চুক্তি হয়েছিল। চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে এই প্রতিশ্রুতি আগের অর্থ বছরের তুলনায় ৬৭ শতাংশ কম।
এ বিষয়ে ইআরডির ফরেন এইড বাজেট উইংয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থ বছরে এখনও জাপানের সঙ্গে ঋণ চুক্তি হয়নি। এডিবি এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কয়েকটি প্রকল্পের বিপরীতে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এসব চুক্তি হয়ে গেলে নতুন প্রতিশ্রুতিতে ভারসাম্য আসতে পারে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের আট মাসে দাতাদের চুক্তিকৃত অর্থছাড় গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ কমে গেছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে ছাড় হয়েছে ৪১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। গত অর্থ বছরের একই সময়ে ৮৬ কোটি ডলার বেশি ছাড় হয়েছিল।গত অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাড় হয়েছিল ৪৯৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও দাতাদের পাওনার কিস্তি আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি (২৬৩ কোটি ৬৪ লাখ ডলার) পরিশোধ করতে হয়েছে। গত অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয়েছিল ২০৩ কোটি ডলারের ঋণ।
এ হিসাবে চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাস পর্যন্ত দাতাদের কাছে তাদের পাওনা পরিশোধের পর বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪৯ কোটি ৭৯ লাখ ডলার বা প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার।
আগের অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২৯৬ কোটি ডলার বা প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
কমেন্ট