সব শর্ত মেনে আইএমএফের ঋণ নয়: সালেহ উদ্দিন
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আইএমএফের ঋণের বাকি কিস্তিগুলোর অর্থ পেতে অন্তর্বর্তী সরকার মরিয়া নয়। তাদের সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না। বাংলাদেশের অর্থনীতি অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় ভালো। তাই ঋণ দেওয়ার বিপরীতে সংস্থাটির যেকোনো শর্ত আমরা মানব না।”
বাংলাদেশ এখন আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমদ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আইএমএফের ঋণের বাকি কিস্তিগুলোর অর্থ পেতে অন্তর্বর্তী সরকার মরিয়া নয়। তাদের সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না। বাংলাদেশের অর্থনীতি অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় ভালো। তাই ঋণ দেওয়ার বিপরীতে সংস্থাটির যেকোনো শর্ত আমরা মানব না।”
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন অর্থ উপদেষ্টা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, “আইএমএফ চায় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক। যদি সেটি করা হয়, তবে ডলারের বিনিময় হার ১৬০-২০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তখন পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো হতে পারে।
“দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আইএমএফের সব শর্ত মানব না। আমরা আমাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিব।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আইএমএফ কিস্তি দিলে দিবে, না দিলে নিজেদের মতো করেই বাজেট করব।”
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি সাত কিস্তিতে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি।
এরপর তিন কিস্তির অর্থও পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। ওই বছরের ডিসেম্বরে পায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত বছরের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে।
তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার পাওয়ার কথা চার কিস্তিতে।
দুই পক্ষ (সরকার ও আইএমএফ) সমঝোতায় আসতে না পারায় বাকি চার কিস্তির ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার পাওয়া এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবারই প্রথম অফিস করেন। ওই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার যোগ দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ২১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল শেষ হয় এ বৈঠক। বৈঠকের ফাঁকে আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলাদা বৈঠক হয়।
এই বৈঠকের আগে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকা ঘুরে গেছে। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া নিয়ে ইতিবাচক বার্তা পাওয়া যায়নি।
ওয়াশিংটনে থাকার সময় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোথায় এসে ঠেকেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর ২৪ এপ্রিল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “বিষয় তো একটাই, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা। আইএমএফ এ ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থানে আছে। প্রশ্নটা হচ্ছে সময়ের। এটা কি (কিস্তি ছাড়ের) আগে করব, না পরে।”
চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার পাওয়ার কথা ছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। পরে তা পিছিয়ে মার্চ মাসে ছাড় করা হবে বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি; সেটাও করেনি।
পরে জানানো হয় দুই কিস্তির অর্থ (চতুর্থ ও পঞ্চম) একসঙ্গে ছাড় করার বিষয়ে আলোচনা হবে। সেই আলোচনার জন্য গত ৫ এপ্রিল দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকায় আসে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল।
সফর শেষ করে ওয়াশিংটন ফিরে যাওয়ার আগে ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের প্রধান আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, “এ বিষয়ে আলোচনা আরও চলবে আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে।”
ওই বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে দুই কিস্তির অর্থ (চতুর্থ ও পঞ্চম) আগামী জুনের শেষ দিকে এক সঙ্গে পাওয়া যেতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নয় মাস হতে চলেছে; এই সময়ে আইএমএফের কোনও ঋণ পায়নি বাংলাদেশ।
আইএমএফ তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছিল গত বছরের জুনে।
কমেন্ট