মুদ্রানীতির প্রভাব পুঁজিবাজারে, লেনদেন তলানিতে

মুদ্রানীতির প্রভাব পুঁজিবাজারে, লেনদেন তলানিতে

প্রতীকি ছবি

টানা চার দিন দরপতনের পর পুঁজিবাজারে মূল্যসূচক সামান্য বাড়লেও লেনদেন তলানিতে নেমে এসেছে। দুই মাস পর দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে।

নতুন মুদ্রানীতিকে ঘিরে বাজারে মন্দাভাব চলছে। আর তার প্রভাবেই লেনদেন হঠাৎ করে কমে গেছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮২ পয়েন্টে।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৫৬০ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিতে চাইছেন। তবে কম দামেও ক্রেতার দেখা মিলছে না।

রোজার ঈদের আগে থেকে একটু একটু করে গতি ফিরতে থাকা পুঁজিবাজারের এই ‘উল্টো যাত্রা’ বিনিয়োগকারীদের আবার হতাশ করছে।

আগের চার দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৮ পয়েন্ট। আগের দুই মাস ধরে একটু একটু করে গতি ফেরা বাজারে তৈরি হওয়া স্বপ্ন এই চার দিনের পতনেই ‘ফিকে’হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে সূচক আরও ১০ পয়েন্ট পড়ে গেলে হতাশা আরও বাড়তে থাকে। তবে এরপর থেকেই সূচক বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ৫ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন।

৮৯টি কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির এই দিনে কমেছে ৬২টির দর। ১৮৮টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে আগে দিনের দরে। এর সিংহভাই হাতবদল হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে। তবে সংখ্যায় খুবই কম।

সারাদিনে হাতবদল হয়েছে ৪৬৫ কোটি ৭ লাখ ২৬ হাজার টাকার শেয়ার। এর আগে সবশেষ ৫০০ কোটি টাকার নিচে লেনদেন হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল। ৩৮ কর্মদিবস আগের সেই দিনে হাতবদল হয় ৪৪৩ কোটি ৫৮ লাখ ১৮ হাজার টাকার শেয়ার।

সেদিনের পর থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন একটু করে বাড়তে থাকে। বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে শুরু করায় বাড়তে থাকে লেনদেন, বাড়ে সূচকও। গত সপ্তাহেই চলতি বছরের সর্বোচ্চ সূচক ও লেনদেন দেখা যায়।

গত ৪ জুন সূচক দাঁড়ায় সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান, ৬ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে। তার পরের দিন লেনদেন দাঁড়ায় ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকারও বেশি। এটিও গত নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ।

৬ জুন থেকেই মূলত বাজারের ‘পথ হারানো’শুরু। বেশিরভাগ কোম্পানিই ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার পরও ৪০ পয়েন্ট সূচকের পতনে তৈরি হয় বিস্ময়।

পরে জানা যায়, মূলধনী আয়ে কর বসার গুজবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি কাটায় পরের দুই দিন বাজারে উত্থান হয়। কিন্তু চলতি সপ্তাহের লেনদেন বিনিয়োগকারীদেরকে আবার হতাশার বৃত্তে ফেলে দিল।

নতুন মুদ্রানীতিকে ঘিরে বাজার এই আচরণ করছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী। এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “হঠাৎ করে লেনদেন ৫০০ কোটির নিচে নেমে আসাটা বিস্ময়কর। কয়েক দিন আগেও এই বাজারে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। সেই বাজারে লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।”

তিনি বলেন, ‘আগামী রোববার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।  প্রতিবারই মুদ্রানীতিকে ঘিরে বাজার থমকে থাকে। এবারও তাই হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বাজারে কথা আছে, মূল্যস্ফীতির লঅগাম টেনে ধরতে এবার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দেয়া হবে। তাতে বাজারে ঋণপ্রবাহ কমে যাবে। তার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারেও পড়বে।”

বাজার নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের ভাবা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের কর্ণধার শাকিল রিজভী।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৪৬৫ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা গত ২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল ডিএসইতে ৫৫২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

বুধবার এই বাজারে ৭২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৩৪০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৯টির, কমেছে ৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮৯টির দর।

অপর বাজার সিএসইতে ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

 

পুঁজিবাজারে টানা দরপতন, ক্ষুব্দ বিনিয়োগকারীরা পরবর্তী

পুঁজিবাজারে টানা দরপতন, ক্ষুব্দ বিনিয়োগকারীরা

কমেন্ট