বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে সহায়তা করবে আইএমএফ
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। ছবি-এআরএইচ ডটকম
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের উন্নতি দেখতে চায় আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বৈঠক করেন।
বৈঠকে সেকেন্ডারি মার্কেটে সরকারি বন্ডের উন্নয়নের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেকেন্ডারি মার্কেটে সরকারি বন্ডের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সরকারি বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করতে চায় আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক। গত মঙ্গলবার তারা ঢাকায় এসেছেন। আজকে (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি বন্ড নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আইএমএফের পাঁচ জন ও বিশ্বব্যাংকের দুই জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মেজবাউল হক বলেন, “সরকারি বন্ড নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গেও এই প্রতিনিধি দল বৈঠক করবেন। তাদের মূল লক্ষ্যই সেকেন্ডারি মার্কেটে সরকারি বন্ডের উন্নতি করা।”
আর এ জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রয়োজন হলে তা দিতেও দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে স্থানীয় মুদ্রার বন্ড বাজার উন্নয়ন (লোকাল কারেন্সি বন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট- এলসিবিএম) নিয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে।
আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি ১৭ জুলাই পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী স্থানীয় মুদ্রার বন্ড বাজার প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন কৌশল ও ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। আইএমএফও এ বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে আসছে।
এটি প্রতিষ্ঠা হলে তা দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের সহজ উৎস হবে এবং স্বল্পমেয়াদী ব্যাংক ঋণের ওপর থেকে নির্ভরতা কমে আসবে।
বন্ড বাজার উন্নত হওয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সামনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো আরও বিস্তৃত হবে। সেইসঙ্গে সরকারও অবকাঠামো প্রকল্প এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারবে।
আইএমএফের দক্ষতা ও নির্দেশনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের বন্ড বাজার গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।
আইএমএফ প্রতিনিধি দল দুই সপ্তাহের এই সফরে এলসিবিএম, ক্লাইমেট রিলেটেড বন্ড, মিডিয়াম-টার্ম ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, ডোমেস্টিক সেভিংস, কন্ট্রাকচুয়াল সেভিংস, সোশ্যাল সেফটি নেট এবং ডেট সাস্টেইনেবিলিটি সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত নেবে।
এছাড়া ডেট অ্যান্ড ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট (ঋণ ও অর্থ ব্যবস্থাপনা) বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য নেবে তারা। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা, পরিচালন কাঠামো ও নীতি বিষয়ক তথ্য থাকবে।
এছাড়া ইআরডি, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে এসব বিষয়ে কীভাবে সমন্বয় হচ্ছে, তাও রয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের আলোচনার সূচিতে।
মিশন সফরের শেষ দিনে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বন্ড মার্কেট বিষয়ে একটি সারাংশ তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের সুপারিশগুলোও জানাবে প্রতিনিধি দল।
বাংলাদেশের জন্য আইএমএফ গত ৩০ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। অনুমোদনের পরপরই এই ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি।
২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৩ বছরে ৭টি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ সাধারণত প্রতিটি কিস্তি ছাড়ের আগে ঋণের শর্তের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে। সে অনুযায়ী, আইএমএফের একটি দল আগামী সেপ্টেম্বরে আসবে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে।
এখনকার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঋণের কিস্তি পর্যালোচনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান তিনি।
১৪ জুলাই আসছেন আইএমএফের ডিএমডি
এদিকে এক দিনের সফরে আগামী ১৪ জুলাই ঢাকায় আসছেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) বো লি। তিনি আইএমএফের চার উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের একজন। তার সঙ্গে আইএমএফের আরও কয়েকজন থাকার কথা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় টেকসই ব্যবস্থা, সবুজ অর্থায়ন ইত্যাদি বিষয়ে একটি সেমিনারে অংশ নিতে বো লি ঢাকায় আসবেন বলে জানা গেছে। তার এ সফরে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কারও সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক হওয়ার সময় নির্ধারিত নেই। ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে তারা উঠবেন, একই হোটেলেই সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে অর্থ বিভাগসহ সরকারের কয়েকটি দপ্তরের সরকারি কর্মচারীরা যোগ দেবেন।
২০২১ সালের ২৩ আগস্ট আইএমএফের ডিএমডি হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে বো লি ব্যাংক অব চায়নার ডেপুটি গভর্নর ছিলেন।
কমেন্ট