ডিএসইতে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ালেও সূচক পড়েছে
লেনদেন বাড়লেও সূচক কমেছে পুঁজিবাজারে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। দুই বাজারেই একই চিত্র দেখা গেছে।
ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই লেনদেন বাড়তে বাড়তে সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেছে।
তবে এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এই লেনদেনের দিন হাসিমুখে ছিলেন না বিনিয়োগাকারীরা। ঢালাও দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে।
সোমবার সকালে শেয়রদর বেড়ে গিয়েও শেষ বেলায় বিক্রয়চাপে দরপতন হয়। সূচকে প্রভাব ফেলে বড় মূলধনী এমন শতাধিক কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার মধ্যেও ১৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট পতনে আর্থিক ক্ষতিই হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
এমন কোনো খাত ছিল না যেখানে দরপতন হয়নি। সকালে বেড়ে গিয়ে দিন শেষে পতনে এক দিনেই ক্ষতির শিকার হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
এক দিনে শেয়ারের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দরপতন বা উত্থান সম্ভব। তবে সকালে বেড়ে গিয়ে পরে দরপতনের কারণে এক দিনেই ১০ শতাংশের বেশি টাকা হারিয়েছেন বহু বিনিয়োগকারী।
দরপতনের দিনটিতে লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে খাদ্য খাত। আগের কয়েক দিন শীর্ষে থাকা বস্ত্রকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে এনেছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মাসের পর মার তলানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত।
রোজার ঈদের পর বাজারের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থানা বীমা খাতের আরও পতন হয়েছে। লেনদেনের হিসাবে চতুর্থ অবস্থানে থাকা এই খাতটি আরও তলানিতে নেমেছে।
সকালে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লেও শেষ পর্যন্ত ৩৭টির দর বেড়ে ১৬০টির কমে এবং ১৭৯টি কোম্পানি আগের দিনের দরে থেকে লেনদেন শেষ করেছে।
সব মিলিয়ে ৩৭৬টি কোম্পানির কিছু না কিছু শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত বছরের ৩১ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার পর কোনো দিন ৫০টির বেশি, কোনেদিন একশটির বেশি শেয়ারের ক্রেতা ছিল না। এদিন ক্রেতা না থাকা কোম্পানির সংখ্যা ছিল ১৩।
দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৪ কোটি ৩ লাখ ৭৭ হাজার। গত ১১ জুনের পর এই প্রথম হাজার কোটি টাকার বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। তবে এটি গত ৬ জুনের পর সর্বোচ্চ লেনদেন।
সপ্তাহের প্রথম দিন ডিএসইতে ৯২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।
ঈদুল আজহার ছুটি শেষে এ নিয়ে টানা সাত কর্মদিবস লেনদেন বাড়ল। ছুটির পর ২ জুলাই প্রথম লেনদেন দিবসে ডিএসইতে ৫১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
ঈদের আগে ২৬ জুন শেষ লেনদেনের দিন এই বাজারে ৭৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
রোববার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩২৫ দশমিক ২০ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯০ পয়েন্টে।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৮ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৭০৩ দশমিক ১৯ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
আগের দিন রোববার এই বাজারে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
ঈদের ছুটির পর প্রথম লেনদেন দিবসে এই বাজারে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
২১৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪০টির, কমেছে ৯৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৮টির দর।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে
কেবল একটি কোম্পানি দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁতে পেরেছে। কোম্পানিটি হল ওষুধ খাতের সেন্ট্রাল ফার্মা। এই কোম্পানিটি লোকসানি।
১০টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিই এ খাতের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.০৬ শতাংশ দর বেড়েছে একই খাতের কেয়া কসমেটিকস। কয়েক মাস ধরে ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতা ছিল না লোকসানি কোম্পানিটির।
অষ্টম থেকে দশম স্থানে ছিল সিলকো ফার্মা, ইন্দোবাংলা ফার্মা ও ফার কেমিক্যালস। সবগুলোর দর বেড়েছে ২ শতাংশ।
এছাড়া সি পার্ল ও লিগাসি ফুটওয়্যারের দর ৫ শতাংশের বেশি, হাইডেলবার্গ সিমেন্টের দর ৪ শতাংশের বেশি, ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফাস ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।
পতনের শীর্ষে
দরপতনের শীর্ষ দশের মধ্যে তিনটি কোম্পানি ছিল বস্ত্র খাতের। সমান সংখ্যক কোম্পানি ছিল জীবন বীমার, দুটি ব্যাংক খাতের।
এই তালিকার শীর্ষে থাকা অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজ দর হারিয়েছে ৯.১৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল বস্ত্র খাতের ঢাকা ডায়িং, যেটি দর হারিয়েছে প্রায় সাড়ে আট শতাংশ। একই খাতের তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ প্রায় ৭ শতাংশ এবং নারগাঁও টেক্সটাইলস ৬ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।
জীবন বীমার তিন কোম্পানি সোনালী লাইফ ৭ শতাংশের বেশি, মেঘনা লাইফ ৬.৬৮ শতাংশ এবং রূপালী লাইফ ৬.৬৫ শতাংশ দর হারিয়েছে। ব্যাংক খাতের দুই কোম্পানির মধ্যে মিডল্যান্ড প্রায় ৭ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংক দর হারিয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।
শীর্ষ দশের নবম স্থানে থাকা খুলনা পেপারের দর কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ।
কমেন্ট